পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৭৯

চতুর্বিধ কার্য সজ্জনের অকর্তব্য, তথাপি তোমার প্রত্যয়ের জন্য আমি নিজের প্রশংসাবাক্য বলছি। অশ্বচালনায়, অশ্বতত্ত্বের জ্ঞানে এবং অশ্বচিকিৎসায় আমি মাতলির ন্যায় ইন্দ্রের সারথি হবার যোগ্য। সূতপুত্র, তুমি উদ্‌বিগ্ন হয়ো না, অর্জুনের সহিত যুদ্ধের সময় আমি তোমার রথ চালাব।

 পরদিন প্রভাতকালে রথ প্রস্তুত হ’লে শল্য ও কর্ণ তাতে আরোহণ করলেন। দুর্যোধন বললেন, অধিরথপুত্র মহাবীর কর্ণ, ভীষ্ম ও দ্রোণ যে দুষ্কর কর্ম করতে পারেন নি তুমি তা সম্পন্ন কর। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে বন্দী কর, অথবা অর্জুন ভীম নকুল ও সহদেবকে বধ কর এবং সমস্ত পাণ্ডবসৈন্য ভস্মসাৎ কর। তখন সহস্র সহস্র তূরী ও ভেরী মেঘগর্জনের ন্যায় বেজে উঠল। কর্ণ শল্যকে বললেন, মহাবাহু, আপনি অশ্বচালনা করুন, আজ আমি ধনঞ্জয়, ভীমসেন, দুই মাদ্রীপুত্র ও রাজা যুধিষ্ঠিরকে বধ করব। আজ অর্জুন আমার বাহুবল দেখবে, পাণ্ডবদের বিনাশ এবং দুর্যোধনের জয়ের নিমিত্ত আজ আমি শত শত অতি তীক্ষ্ণ বাণ নিক্ষেপ করব।

 শল্য বললেন, সূতপত্র, পাণ্ডবরা মহাধনুর্ধর, তুমি তাঁদের অবজ্ঞা করছ কেন? যখন তুমি বজ্রনাদতুল্য গাণ্ডীবের নির্ঘোষ শুনবে তখন আর এমন কথা বলবে না। যখন দেখবে যে পাণ্ডবগণ বাণবর্ষণ ক’রে আকাশ মেঘাচ্ছন্নের ন্যায় ছায়াময় করছেন, ক্ষিপ্রহস্তে শত্রুসৈন্য বিদীর্ণ করছেন, তখন আর এমন কথা বলবে না। শল্যের কথা অগ্রাহ্য ক’রে কর্ণ বললেন, চলুন।

১০। কর্ণ-শল্যের কলহ

 কর্ণ যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন দেখে কৌরবগণ হৃষ্ট হলেন। সেই সময়ে ভূমিকম্প, উল্কাপাত, বিনা মেঘে বজ্রপাত, কর্ণের অশ্বসকলের পদস্খলন, আকাশ হতে অস্থিবর্ষণ প্রভৃতি নানা দুর্নিমিত্ত দেখা গেল, কিন্তু দৈববশে মোহগ্রস্ত কৌরবগণ সে সকল গ্রাহ্য করলেন না, কর্ণের উদ্দেশে জয়ধ্বনি করতে লাগলেন।

 অভিমানে দর্পে ও ক্রোধে যেন জ্ব’লে উঠে কর্ণ শল্যকে বললেন, আমি যখন ধনু হাতে নিয়ে রথে থাকি তখন বজ্রপাণি ক্রুদ্ধ ইন্দ্রকেও ভয় করি না, ভীষ্মপ্রমুখ বীরগণের পতন দেখেও আমার স্থৈর্য নষ্ট হয় না। আমি জানি যে কর্ম অনিত্য, সেজন্য ইহলোকে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। আচার্য দ্রোণের নিধনের পর কোন্ লোক নিঃসংশয়ে বলতে পারে যে কাল সূর্যোদয়ের সময় সে বেঁচে