পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮০
মহাভারত

থাকবে? মদ্ররাজ, আপনি সত্বর পাণ্ডব পাঞ্চাল ও সৃঞ্জয়গণের দিকে রথ নিয়ে চলুন, আমি তাদের যুদ্ধে বধ করব অথবা দ্রোণের ন্যায় যমলোকে যাব। পরশুরাম আমাকে এই ব্যাঘ্রচর্মাবৃত উত্তম রথ দিয়েছেন। এর চক্রে শব্দ হয় না, এতে তিনটি স্বর্ণময় কোষ এবং তিনটি রজতময় দণ্ড অছে, চারটি উত্তম অশ্ব এর বাহন। বিচিত্র ধনু, ধ্বজ, গদা, ভয়ংকর শর, উজ্জ্বল অসি ও অন্যান্য অস্ত্র এবং ঘোর শব্দকারী শুভ্র শঙ্খও তিনি আমাকে দিয়েছেন। এই রথে আরূঢ় থেকে আজ আমি অর্জুনকে মারব, কিংবা সর্বহর মৃত্যু যদি তাকে ছেড়ে দেন তবে আমিই ভীষ্মের পথে যমলোকে যাব।

 শল্য বললেন, কর্ণ, থাম থাম, আর আত্মপ্রশংসা ক’রো না, তুমি অতিরিক্ত ও অযোগ্য কথা বলছ। কোথায় পুরুষশ্রেষ্ঠ ধনঞ্জয়, আর কোথায় পুরুষাধম তুমি! অর্জুন ভিন্ন আর কে ইন্দ্রপুরীর তুল্য দ্বারকা থেকে কৃষ্ণভগিনী সুভদ্রাকে হরণ করতে পারেন? কোন্ পুরুষ কিরাতবেশী মহাদেবকে যুদ্ধে আহ্বান করতে পারেন? তোমার মনে পড়ে কি, ঘোষযাত্রার সময় যখন গন্ধর্বরা দুর্যোধনকে ধ’রে নিয়ে যাচ্ছিল তখন অর্জুনই তাঁকে উদ্ধার করেছিলেন? সেই যুদ্ধে প্রথমেই তুমি পালিয়েছিলে এবং পাণ্ডবগণই কলহপ্রিয় ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তোমরা যখন সসৈন্যে ভীষ্ম দ্রোণ ও অশ্বত্থামার সঙ্গে বিরাটের গরু চুরি করতে গিয়েছিলে তখন অর্জুনই তোমাদের জয় করেছিলেন, তুমি তাঁকে জয় কর নি কেন? সূতপত্র, ঘোর যুদ্ধ আসন্ন হয়েছে, যদি পালিয়ে না যাও তবে আজ তুমি মরবে।

 কর্ণ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে শল্যকে বললেন, হয়েছে হয়েছে, অর্জুনের এত প্রশংসা করছেন কেন? সে যদি যুদ্ধে আজ আমাকে জয় করতে পারে তবেই আপনার প্রশংসা সার্থক হবে। ‘তাই হবে’ ব’লে শল্য আর উত্তর দিলেন না, কর্ণের ইচ্ছানুসারে রথচালনা করলেন। পাণ্ডবসৈন্যের নিকটে এসে কর্ণ বললেন, অর্জুন কোথায়? অর্জুনকে যে দেখিয়ে দেবে আমি তার অভীষ্ট পূরণ করব, তাকে একটি রত্নপূর্ণ শকট দেব, অথবা এক শত দুগ্ধবতী গাভী ও কাংস্যের দোহনপাত্র দেব, অথবা এক শত গ্রাম দেব। সে যদি চায় তবে সালংকারা গীতবাদ্যনিপুণা এক শত সুন্দরী যুবতী বা হস্তী রথ অশ্ব বা ভারবাহী বৃষ অথবা অন্য যে বস্তু তার কাম্য তা দেব।

 কর্ণের কথা শুনে দুর্যোধন ও তাঁর অনুচরগণ হৃষ্ট হলেন। শল্য হাস্য ক’রে বললেন, সূতপত্র, তোমাকে হস্তী বা সুবর্ণ বা গাভী কিছুই দিতে হবে না, তুমি পুরস্কার না দিয়েই ধনঞ্জয়কে দেখতে পাবে। পূর্বে মূর্খের ন্যায় বিস্তর