পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
মহাভারত

সর্পাপসর্প ভদ্রং তে গচ্ছ সর্প মহাবিষ।
জনমেজয়স্য যজ্ঞান্তে আস্তীকবচনং স্মর॥
আস্তীকস্য বচঃ শ্রুত্বা যঃ সর্পো ন নিবর্ততে।
শতধা ভিদ্যতে মূর্ধা শিংশবৃক্ষফলং যথা॥[১]

 —হে মহাভাগ সর্পগণ, যিনি সর্পসরে তোমাদের রক্ষা করেছিলেন সেই আস্তীককে স্মরণ করছি, আমার হিংসা ক’রো না। সর্প, স’রে যাও, তোমার ভাল হ’ক; মহাবিষ সর্প, চ’লে যাও, জনমেজয়ের যজ্ঞের পর আস্তীকের বাক্য স্মরণ কর। আম্ভীকের কথায় যে সর্প নিবৃত্ত হয় না তার মস্তক শিমূল[২] ফলের ন্যায় শতধা বিদীর্ণ হয়।


॥ আদিবংশাবতরণপর্বাধ্যায়॥

১০। উপরিচর বসু—পরাশর-সত্যবতী—কৃষ্ণদ্বৈপায়ন

 শৌনক বললেন, বৎস সৌতি, সর্পসত্রে কর্মের অবকাশে ব্যাসশিষ্য বৈশম্পায়ন প্রতিদিন যে মহাভারত পাঠ করতেন তাই আমরা এখন শুনতে ইচ্ছা করি। সৌতি বললেন, জনমেজয়ের অনুরোধে ব্যাসদেবের আদেশে তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়ন যে মহাভারতকথা বলেছিলেন তা আপনারা শুনুন।—

 [৩]চেদি দেশে উপরিচর বসু নামে পুরুবংশজাত এক রাজা ছিলেন। ইন্দ্র তাঁকে সখা গণ্য ক’রে স্ফটিকময় বিমান, অম্লান পঙ্কজের বৈজয়ন্তী মালা এবং একটি বংশনির্মিত যষ্টি দিয়েছিলেন। উপরিচর অগ্রহায়ণ মাসে উৎসব ক’রে সেই যষ্টি রাজপুরীতে এনে ইন্দ্রপূজা করতেন। পরদিন তিনি গন্ধমাল্যাদির দ্বারা অলংকৃত এবং কুসম্ভ পুষ্পে রঞ্জিত বস্ত্রে বেষ্টিত ক’রে ইন্দ্রধ্বজ উত্তোলন করতেন। সেই অবধি অন্যান্য রাজারাও এইপ্রকার উৎসব ক’রে থাকেন। উপরিচর ইন্দ্রদত্ত বিমানে আকাশে বিচরণ করতেন সেই কারণেই তাঁর এই নাম। তাঁর পাঁচ পুত্র ছিল, তাঁরা বিভিন্ন দেশে রাজবংশ স্থাপন করেন।

 উপরিচরের রাজধানীর নিকট শক্তিমতী নদী ছিল। কোলাহল নামক পর্বত এই নদীর গর্ভে এক পুত্র এবং এক কন্যা উৎপাদন করে। রাজা সেই পুত্রকে


  1. সর্পভয়বারক মন্ত্র।
  2. শিংশ বা শিংশপার প্রচলিত অর্থ শিশুগাছ, কিন্তু ব্যাখ্যাকারগণ শিমূল অর্থ করেছেন।
  3. এইখানে মহাভারতের মূল আখ্যানের আরম্ভ।