পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৪
মহাভারত

তুল্য; ধৃতরাষ্ট্রপউত্রদের উচ্ছিষ্টে পালিত হয়ে তোমার সমান এবং তোমার অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সকল লোককে তুমি অবজ্ঞা ক’রে থাক। কাক যেমন শেষকালে বুদ্ধি ক’রে হংসের শরণ নিয়েছিল তুমিও তেমন কৃষ্ণার্জুনের শরণ নাও।

১২। কর্ণের শাপবৃত্তান্ত

 কর্ণ বললেন, কৃষ্ণ ও অর্জুনের শক্তি আমি যথার্থরূপে জানি, তথাপি আমি নির্ভয়ে তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধ করব। কিন্তু ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ পরশুরাম আমাকে যে শাপ দিয়েছিলেন তার জন্যই আমি উদ্‌বিগ্ন হয়ে আছি। পূর্বে আমি দিব্যাস্ত্র শিক্ষার জন্য ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে পরশুরামের নিকট বাস করতাম। একদিন গুরুদেব আমার ঊরুতে মস্তক রেখে নিদ্রা যাচ্ছিলেন সেই সময়ে অর্জুনের হিতকামী দেবরাজ ইন্দ্র এক বিকট কীটের রূপ ধারণ ক’রে আমার ঊরু বিদীর্ণ করলেন। সেখান থেকে অত্যন্ত রক্তস্রাব হ’তে লাগল, কিন্তু গুরুর নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে আমি নিশ্চল হয়ে রইলাম। জাগরণের পর তিনি আমার সহিষ্ণুতা দেখে বললেন, তুমি ব্রাহ্মণ নও, সত্য বল তুমি কে। তখন আমি নিজের যথার্থ পরিচয় দিলাম। পরশুরাম ক্রুদ্ধ হয়ে আমাকে এই শাপ দিলেন—সূত, তুমি কপট উপায়ে আমার কাছে যে অস্ত্র লাভ করেছ, কার্যকালে তা তোমার স্মরণ হবে না, মৃত্যুকাল ভিন্ন অন্য সময়ে মনে পড়বে; কারণ, বেদমন্ত্রযুক্ত অস্ত্র অব্রাহ্মণের নিকট স্থায়ী হয় না।

 তার পর কর্ণ বললেন, আজ যে তুমুল সংগ্রাম আসন্ন হয়েছে তাতে সেই অস্ত্রই আমার পক্ষে পর্যাপ্ত হ’ত। কিন্তু আজ আমি অন্য অস্ত্র স্মরণ করছি যার দ্বারা অর্জুন প্রভৃতি শত্রুকে নিপাতিত করব। আজ আমি অর্জুনের প্রতি যে ব্রাহ্ম অস্ত্র নিক্ষেপ করব তার শক্তি ধারণাতীত। যদি আমার রথচক্র গর্তে না পড়ে তবে অর্জুন আজ মুক্তি পাবে না। মদ্ররাজ, পূর্বে অস্ত্রাভ্যাসকালে অসাবধানতার ফলে আমি এক ব্রাহ্মণের হোমধেনুর বৎসকে শরাঘাতে বধ করেছিলাম। তার জন্য তিনি আমাকে শাপ দিয়েছিলেন—যুদ্ধকালে তোমার মহাভয় উপস্থিত হবে এবং রথচক্র গর্তে পড়বে। আমি সেই ব্রাহ্মণকে বহু ধেনু বৃষ হস্তী দাসদাসী সুসজ্জিত গৃহ এবং আমার সমস্ত ধন দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি প্রসন্ন হলেন না। শল্য, আপনি আমার নিন্দা করলেও সৌহার্দের জন্য এইসব কথা বললাম। আপনি জানবেন যে কর্ণ ভয় পাবার জন্য জন্মগ্রহণ