পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৮৫

করে নি, বিক্রমপ্রকাশ ও যশোলাভের জন্যই জন্মেছে। সহস্র শল্যের অভাবেও আমি শত্রুজয় করতে পারি।

 শল্য বললেন, তুমি বিপক্ষদের উদ্দেশে যা বললে তা প্রলাপ মাত্র। আমি সহস্র কর্ণ ব্যতীত যুদ্ধে শত্রুজয় করতে পারি।

 শল্যের নিষ্ঠুর কথা শুনে কর্ণ আবার মদ্রদেশের নিন্দা করতে লাগলেন। তিনি বললেন, কোনও ব্রাহ্মণ আমার পিতার নিকট বাহীক[১] ও মদ্র দেশের এই কুৎসা করেছিলেন।—যে দেশ হিমালয় গঙ্গা সরস্বতী যমুনা ও কুরুক্ষেত্রের বহির্ভাগে, এবং যা সিন্ধু শতদ্রু বিপাশা ইরাবতী চন্দ্রভাগা ও বিতস্তার মধ্যে অবস্থিত, সেই ধর্মহীন অশুচি বাহীক দেশ বর্জন করবে। জর্তিক নামক বাহীকদেশবাসীর আচরণ অতি নিন্দিত, তারা গুড়ের মদ্য পান করে, লসুনের সহিত গোমাংস খায়, তাদের নারীরা দুশ্চরিত্রা ও অশ্লীলভাষিণী। আরট্ট নামক বাহীকগণ মেষ উষ্ট্র ও গর্দভের দুগ্ধ পান করে এবং জারজ পুত্র উৎপাদন করায়। কোনও এক সতী নারীর অভিশাপের ফলে সেখানকার নারীরা বহুভোগ্যা, সেদেশে ভাগিনেয়ই উত্তরাধিকারী হয়, পুত্র নয়। পাঞ্চনদ প্রদেশের আরট্টগণ কৃতঘ্ন পরস্বাপহারী মদ্যপ গুরুপত্নীগামী নিষ্ঠুরভাষী গোঘাতক, তাদের ধর্ম নেই, অধর্মই আছে।

 শল্য বললেন, কর্ণ, তুমি যে দেশের রাজা সেই অঙ্গদেশের লোকে আতুরকে পরিত্যাগ করে, নিজের স্ত্রীপুত্র বিক্রয় করে। কোনও দেশের সকল লোকেই পাপাচরণ করে না, অনেকে এমন সচ্চরিত্র যে দেবতারাও তেমন নন।

 তার পর দুর্যোধন এসে মিত্ররূপে কর্ণকে এবং স্বজনরূপে শল্যকে কলহ থেকে নিবৃত্ত করলেন। কর্ণ হাস্য ক’রে শল্যকে বললেন, এখন রথ চালান।

১৩। কর্ণের সহিত যুধিষ্ঠির ও ভীমের যুদ্ধ

(সপ্তদশ দিনের যুদ্ধ)

 ব্যূহ রচনা ক’রে কর্ণ পাণ্ডববাহিনীর দিকে অগ্রসর হলেন। কৃপ ও কৃতবর্মা ব্যূহের দক্ষিণে রইলেন। পিশাচের ন্যায় ভীষণদর্শন দুর্জয় অশ্বারোহী গান্ধার সৈন্য ও পার্বত সৈন্য সহ শকুনি ও উলূক তাঁদের পার্শ্ব রক্ষা করতে


  1. বাহ্ণীকের নামান্তর।