পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮৮
মহাভারত

১৪। অশ্বত্থামা ও কর্ণের সহিত যুধিষ্ঠির ও অর্জুনের যুদ্ধ

(সপ্তদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 দুর্যোধন তাঁর ভ্রাতাদের বললেন, কর্ণ বিপৎসাগরে পড়েছেন, তোমরা শীঘ্র গিয়ে তাঁকে রক্ষা কর। তখন ধৃতরাষ্ট্রপুত্রগণ সকল দিক থেকে ভীমকে আক্রমণ করলেন। ভীমের ভল্ল ও নারাচের আঘাতে দুর্যোধনের ভ্রাতা বিবিৎসু বিকট সহ ক্রাথ নন্দ ও উপনন্দ নিহত হলেন। কর্ণ ভীমের ধনু ও রথ বিনষ্ট করলেন, ভীম গদা নিয়ে শত্রুসৈন্য বধ করতে লাগলেন।

 এই সময়ে সংশপ্তক কোশল ও নারায়ণ সৈন্যের সঙ্গে অর্জুনের যুদ্ধ হচ্ছিল। সংশপ্তকগণ অর্জুনের রথ ঘিরে ফেলে তাঁর অশ্ব রথচক্র ও রথদণ্ড ধ’রে সিংহনাদ করতে লাগল। কয়েকজন কৃষ্ণের দুই বিশাল বাহু ধরলে। দুষ্ট হস্তী যেমন চালককে নিপাতিত করে, কৃষ্ণ সেইরূপ তাঁর বাহুদ্বয় সঞ্চালন ক’রে সংশপ্তকগণকে নিপাতিত করলেন। অর্জুন নাগপাশ অস্ত্র প্রয়োগ ক’রে অন্যান্য সংশপ্তকদের পাদবন্ধন করলেন, তারা সর্পবেষ্টিত হয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে রইল। তখন মহারথ সুশর্মা গরুড় অস্ত্র প্রয়োগ করলেন, সর্পগণ ভয়ে পালিয়ে গেল। অর্জুন ঐন্দ্র অস্ত্র মোচন করলেন, তা থেকে অসংখ্য বাণ নির্গত হয়ে শত্রুসৈন্য সংহার করতে লাগল। সংশপ্তকদের চোদ্দ হাজার পদাতি, দশ হাজার রথী এবং তিন হাজার গজারোহী যোদ্ধা ছিল, তাদের মধ্যে দশ হাজার অর্জুনের শরাঘাতে নিহত হ’ল।

 কৌরবসৈন্য অর্জুনের ভয়ে অবসন্ন হয়েছে দেখে কৃতবর্মা কৃপ অশ্বত্থামা কর্ণ শকুনি উলূক এবং ভ্রাতাদের সঙ্গে দুর্যোধন তাদের রক্ষা করতে এলেন। শিখণ্ডী ও ধৃষ্টদ্যুম্ন কৃপাচার্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। অশ্বত্থামা শরাঘাতে আকাশ আচ্ছন্ন ক’রে পাণ্ডবসৈন্য বধ করছেন দেখে সাত্যকি, যুধিষ্ঠির, প্রতিবিন্ধ্য প্রভৃতি পাঁচ সহোদর এবং অন্যান্য বহু বীর সকল দিক থেকে তাঁকে আক্রমণ করলেন। তিমির আলোড়নে নদীমুখ যেমন হয়, দ্রোণপুত্রের প্রতাপে পাণ্ডবসৈন্য সেইরূপ বিক্ষোভিত হ’ল। যুধিষ্ঠির ক্রুদ্ধ হয়ে অশ্বত্থামাকে বললেন, পুরুষব্যাঘ্র, তোমার প্রীতি নেই, কৃতজ্ঞতাও নেই, তুমি আমাকেই বধ করতে চাচ্ছ। ব্রাহ্মণের কার্য তপ দান ও অধ্যয়ন; তুমি নিকৃষ্ট ব্রাহ্মণ তাই ক্ষত্রিয়ের কার্য করছ। অশ্বত্থামা একটু হাসলেন, কিন্তু যুধিষ্ঠিরের অনুযোগ ন্যায্য ও সত্য জেনে কোনও