পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯০
মহাভারত

 মাতুল শল্য অনুকম্পাপরবশ হয়ে কর্ণকে বললেন, তুমি অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ না ক’রে যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে যুদ্ধ করছ কেন? এতে তোমার অস্ত্রশস্ত্রের বৃথা ক্ষয় হবে, তূণীর বাণশূন্য হবে, সারথি ও অশ্ব শ্রান্ত হবে, তুমিও আহত হবে; এমন অবস্থায় অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলে লোকে তোমাকে উপহাস করবে। তুমি অর্জুনকে মারবে ব’লেই দুর্যোধন তোমার সম্মান করেন, যুধিষ্ঠিরকে মেরে তোমার কি হবে? ওই দেখ, ভীমসেন দুর্যোধনকে গ্রাস করছেন, তুমি দুর্যোধনকে রক্ষা কর। তখন যুধিষ্ঠির ও নকুল-সহদেবকে ত্যাগ ক’রে কর্ণ সত্বর দুর্যোধনের দিকে গেলেন।

 যুধিষ্ঠির লজ্জিত হয়ে ক্ষতবিক্ষতদেহে সেনানিবেশে ফিরে এলেন এবং রথ থেকে নেমে শয়নগৃহে প্রবেশ করলেন। তাঁর দেহে যেসকল শল্য বিদ্ধ ছিল তা তুলে ফেলা হ’ল, কিন্তু তাঁর মনের শল্য দূর হ’ল না। তিনি নকুল-সহদেবকে বললেন; তোমরা শীঘ্র ভীমসেনের কাছে যাও, তিনি মেঘের ন্যায় গর্জন করে যুদ্ধ করছেন।

 এদিকে কর্ণ তাঁর বিজয় নামক ধনু থেকে ভার্গবাত্র মোচন করলেন, তা থেকে অসংখ্য বাণ নির্গত হয়ে পাণ্ডবসৈন্য সংহার করতে লাগল। অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, কর্ণের ভার্গবাস্ত্রের শক্তি দেখ, আমি কোনও প্রকারে এই অস্ত্র নিবারণ করতে পারব না, কর্ণের সহিত যুদ্ধে পালাতেও পারব না। কৃষ্ণ বললেন, রাজা যুধিষ্ঠির কর্ণের সহিত যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন। তুমি তাঁর সঙ্গে দেখা ক’রে তাঁকে আশ্বাস দাও, তার পর ফিরে গিয়ে কর্ণকে বধ করবে। কৃষ্ণের উদ্দেশ্য— কর্ণকে যুদ্ধে নিযুক্ত রেখে পরিশ্রান্ত করা, এজন্যই তিনি অর্জুনকে যুধিষ্ঠিরের কাছে নিয়ে চললেন।

১৫। যুধিষ্ঠিরের কটুবাক্য

 যেতে যেতে ভীমকে দেখে অর্জুন বললেন, রাজার সংবাদ কি? তিনি কোথায়? ভীম বললেন, কর্ণের বাণে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ধর্মরাজ এখান থেকে চ’লে গেছেন, হয়তো কোনও প্রকারে বেঁচে উঠবেন। অর্জুন বললেন, আপনি শীঘ্র গিয়ে তাঁর অবস্থা জানুন, আমি এখানে শত্রুদের রোধ করে রাখব। ভীম বললেন, তুমিই তাঁর কাছে যাও, আমি গেলে বীরগণ আমাকে ভীত বললেন। অর্জুন