পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৯১

বললেন, সংশপ্তকদের বধ না ক’রে আমি যেতে পারি না। ভীম বললেন, ধনঞ্জয়, আমিই সমস্ত সংশপ্তকের সঙ্গে যুদ্ধ করব, তুমি যাও।

 শত্রুসৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করবার জন্য ভীমসেনকে রেখে এবং তাঁকে উপদেশ দিয়ে কৃষ্ণ দ্রুতবেগে যুধিষ্ঠিরের শিবিরে রথ নিয়ে এলেন। যুধিষ্ঠির একাকী শুয়ে ছিলেন, কৃষ্ণার্জুন তাঁর পাদবন্দনা করলেন। কর্ণ নিহত হয়েছেন ভেবে ধর্মরাজ হর্ষ গদ্‌গদকণ্ঠে স্বাগত সম্ভাষণ ক’রে বললেন, তোমাদের দুজনকে দেখে আমি অত্যন্ত প্রীত হয়েছি, তোমরা অক্ষতদেহে নিরাপদে সর্বাস্ত্রবিশারদ মহারথ কর্ণকে বধ করেছ তো? কৃতান্ততুল্য সেই কর্ণ আজ আমার সঙ্গে ঘোর যুদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু তাতে আমি কাতর হই নি। সাত্যকি ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি বীরগণকে জয় ক’রে তাঁদের সমক্ষেই কর্ণ আমাকে পরাভূত করেছিলেন, আমাকে বহু নিষ্ঠুর বাক্য বলেছিলেন। ধনঞ্জয়, আমি ভীমের প্রভাবেই জীবিত আছি, এ আমি সইতে পারছি না। কর্ণের ভয়ে আমি তের বৎসর রাত্রিতে নিদ্রা যেতে পারি নি, দিনেও সুখ পাই নি, সকল সময়েই আমি জগৎ কর্ণময় দেখি। সেই বীর আমাকে অশ্ব ও রথ সমেত জীবিত অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছেন, আমার এই ধিকৃত জীবনে ও রাজ্যে কি প্রয়োজন? ভীষ্ম দ্রোণ আর কৃপের কাছে আমি যে লাঞ্ছনা পাই নি আজ সূতপত্রের কাছে তা পেয়েছি। অর্জুন, ভাই জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কিপ্রকারে কর্ণকে বধ করে নিরাপদে ফিরে এসেছ তা সবিস্তারে বল। কর্ণ তোমাকে বধ করবেন এই আশাতেই ধৃতরাষ্ট্র ও তাঁর পুত্রেরা কর্ণের সম্মান করতেন; সেই কর্ণ তোমার হাতে কি ক’রে নিহত হলেন? যিনি বলেছিলেন, ‘কৃষ্ণা, তুমি দুর্বল পতিত দীনপ্রকৃতি পাণ্ডবদের ত্যাগ করছ না কেন?’ যে দুরাত্মা দ্যূতসভায় হাস্য ক’রে দুঃশাসনকে বলেছিল, ‘যাজ্ঞসেনীকে সবলে ধরে নিয়ে এস’ — সেই পাপবুদ্ধি কর্ণ শরাঘাতে বিদীর্ণদেহ হয়ে শুয়ে আছে তো?

 অর্জুন বললেন, মহারাজ, আমি সংশপ্তকদের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলাম সেই সময়ে অশ্বত্থামা আমার সম্মুখে এলেন। আটটি শকট তাঁর বাণ বহন করছিল, আমার সঙ্গে যুদ্ধের সময় তিনি সেই সমস্ত বাণই নিক্ষেপ করলেন। তথাপি আমার শরাঘাতে তাঁর দেহ শজারুর ন্যায় কণ্টকিত হ’ল, তিনি রুধিরাক্তদেহে কর্ণের সৈন্যমধ্যে আশ্রয় নিলেন। তখন কর্ণ পঞ্চাশ জন রথীর সঙ্গে আমার কাছে এলেন। আমি কর্ণের সহচরদের বিনষ্ট ক’রে সত্বর আপনাকে দেখবার জন্য এসেছি। আমি শুনেছি, অশ্বত্থামা ও কর্ণের সহিত যুদ্ধে আপনি আহত হয়েছেন, সে কারণে উপযুক্ত সময়েই আপনি ক্রূরস্বভাব কর্ণের কাছ থেকে চলে এসেছেন। মহারাজ,