পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯২
মহাভারত

যুদ্ধকালে আমি কর্ণের আশ্চর্য ভার্গবাস্ত্র দেখেছি, কর্ণের আক্রমণ সইতে পারেন এমন যোদ্ধা সৃঞ্জয়গণের মধ্যে নেই। আপনি আসুন, দেখবেন আজ আমি রণস্থলে কর্ণের সহিত মিলিত হব। যদি আজ কর্ণকে সবান্ধবে বধ না করি তবে প্রতিজ্ঞাভঙ্গকারীর যে কষ্টকর গতি হয়, আমার যেন তাই হয়। আপনি জয়াশীর্বাদ করুন, যেন আমি সূতপুত্র ও শত্রুগণকে সসৈন্যে বধ করতে পারি।

 কর্ণ সুস্থশরীরে আছেন জেনে শরাঘাতে পীড়িত যুধিষ্ঠির ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, বৎস, তোমার সৈন্যরা পালিয়েছে, তুমি তাদের পিছনে ফেলে এসেছ। কর্ণবধে অক্ষম হয়ে তুমি ভীমকে ত্যাগ ক’রে ভীত হয়ে চলে এসেছ। অর্জুন, তুমি কুন্তীর গর্ভকে হেয় করেছ। আমরা তোমার উপর অনেক আশা রেখেছিলাম, কিন্তু অতিপুষ্পশালী বৃক্ষ যেমন ফল দেয় না সেইরূপ আমাদের আশা বিফল হয়েছে। ভূমিতে উপ্ত বীজ যেমন দৈবকৃত বৃষ্টির প্রতীক্ষায় জীবিত থাকে, আমরাও সেইরূপ রাজ্যলাভের আশায় তের বৎসর তোমার উপর নির্ভর করেছিলাম, কিন্তু এখন তুমি আমাদের সকলকেই নরকে নিমজ্জিত করেছ। মন্দবুদ্ধি, তোমার জন্মের পর কুন্তী আকাশবাণী শুনেছিলেন, ‘এই পুত্র ইন্দ্রের ন্যায় বিক্রমশালী ও সর্বশত্রুজয়ী হবে, মদ্র কলিঙ্গ ও কেকয়গণকে জয় করবে, কৌরবগণকে বধ করবে।’ শতশৃঙ্গ পর্বতের শিখরে তপস্বিগণ এই দৈববাণী শুনেছিলেন, কিন্তু তা সফল হ’ল না, অতএব দেবতারাও অসত্য বলেন। আমি জানতাম না যে তুমি কর্ণের ভয়ে অভিভূত। কেশব যার সারথি সেই বিশ্বকর্মা-নির্মিত শব্দহীন কপিধ্বজ রথে আরোহণ ক’রে এবং স্বর্ণমণ্ডিত খড়্‌গ ও গাণ্ডীবধনু ধারণ ক’রে তুমি কর্ণের ভয়ে পালিয়ে এলে! দুরাত্মা, তুমি যদি কেশবকে ধনু দিয়ে নিজে সারথি হ’তে তবে বজ্রধর দেবরাজ ইন্দ্র যেমন বৃত্রবধ করেছিলেন সেইরূপ কেশব কর্ণকে বধ করতেন। তুমি যদি রাধেয় কর্ণকে আক্রমণ করতে অসমর্থ হও তবে তোমার চেয়ে অস্ত্রবিশারদ অন্য রাজাকে গাণ্ডীবধনু দাও। দুরাত্মা, তুমি যদি পঞ্চম মাসে গর্ভচ্যুত হ’তে কিংবা কুতীর গর্ভে জন্মগ্রহণ না করতে তবে তাই তোমার পক্ষে শ্রেয় হ’ত, তা হ’লে তোমাকে যুদ্ধ থেকে পালাতে হ’ত না। তোমার গাণ্ডীবকে ধিক, তোমার বাহুবল ও বাণসমূহকে ধিক, তোমার কপিধ্বজ ও অগ্নিদত্ত রথকেও ধিক।