পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত
২৫

সেনাপতি এবং কন্যাকে মহিষী করলেন। একদিন মৃগয়া করতে গিয়ে রাজা তাঁর ঋতুস্নাতা রূপবতী মহিষী গিরিকাকে স্মরণ ক’রে কামাবিষ্ট হলেন এবং স্খলিত শুক্র এক শ্যেনপক্ষীকে দিয়ে বললেন, তুমি শীঘ্র গিরিকাকে দিয়ে এস। পথে অন্য এক শ্যেনের আক্রমণের ফলে শুক্র যমুনার জলে প’ড়ে গেল। অদ্রিকা নামে এক অপ্সরা ব্রহ্মশাপে মৎসী হয়ে ছিল, সে শুক্র গ্রহণ ক’রে গর্ভিণী হ’ল এবং দশম মাসে ধীবরের জালে ধৃত হ’ল। ধীবর সেই মৎসীর উদরে একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী সন্তান পেয়ে রাজার কাছে নিয়ে এল। অপ্সরা তখনই শাপমুক্ত হয়ে আকাশপথে চ’লে গেল। উপরিচর ধীবরকে বললেন, এই কন্যা তোমারই হ’ক। পুরুষ সন্তানটি পরে মৎস্য নামে এক ধার্মিক রাজা হয়েছিলেন।

 সেই রূপগুণবতী কন্যার নাম সত্যবতী, কিন্তু সে মৎস্যজীবীদের কাছে থাকত সেজন্য তার অন্য নাম মৎস্যগন্ধা। একদিন সে যমুনায় নৌকা চালাচ্ছিল এমন সময় পরাশর মুনি তীর্থপর্যটন করতে করতে সেখানে এলেন। অতীব রূপবতী চারুহাসিনী মৎস্যগন্ধাকে দেখে মোহিত হয়ে পরাশর বললেন, সুন্দরী, এই নৌকার কর্ণধার কোথায়? সে বললে, যে ধীবরের এই নৌকা তাঁর পুত্র না থাকায় আমিই সকলকে পার করি। পরাশর নৌকায় উঠে যেতে যেতে বললেন, আমি তোমার জন্মবৃত্তান্ত জানি; কল্যাণী, তোমার কাছে বংশধর পুত্র চাচ্ছি, তুমি আমার কামনা পূর্ণ কর। সত্যবতী বললে, ভগবান, পরপারের ঋষিরা আমাদের দেখতে পাবেন। পরাশর তখন কুজ্‌ঝটিকা সৃষ্টি করলেন, সর্বদিক তমসাচ্ছন্ন হ’ল। সত্যবতী লজ্জিত হয়ে বললে, আমি কুমারী, পিতার বশে চলি, আমার কন্যাভাব দূষিত হ’লে কি ক’রে গৃহে ফিরে যাব? পরাশর বললেন, আমার প্রিয়কার্য ক’রে তুমি কুমারীই থাকবে। পরাশরের বরে মৎস্যগন্ধার দেহ সুগন্ধময় হল, সে গন্ধবতী নামে খ্যাত হ’ল। এক যোজন দূর থেকে তার গন্ধ পাওয়া যেত সেজন্য লোকে তাকে যোজনগন্ধাও বলত।

 সত্যবতী সদ্য গর্ভধারণ ক’রে পুত্র প্রসব করলেন। যমুনার দ্বীপে জাত এই পরাশরপুত্রের নাম দ্বৈপায়ন[১], ইনি মাতার আদেশ নিয়ে তপস্যায় রত হলেন। পরে ইনি বেদ বিভক্ত ক’রে ব্যাস নামে বিখ্যাত হন এবং পুত্র শুক ও বৈশম্পায়নাদি শিষ্যকে চতুর্বেদ ও মহাভারত অধ্যয়ন করান। তাঁরাই মহাভারতের সংহিতাগুলি পৃথক পৃথক প্রকাশিত করেন।

  1. এঁর প্রকৃত নাম কৃষ্ণ, দ্বীপে জাত এজন্য উপনাম দ্বৈপায়ন।