পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৪
মহাভারত

মিথ্যাই সত্যতুল্য হিতকর এবং সত্য মিথ্যাতুল্য অহিতকর হয়, সেখানে সত্য বলা অনুচিত, মিথ্যাই বলা উচিত।—

বিবাহকালে রতিসম্প্রয়োগে
প্রাণাত্যয়ে সর্বধনাপহারে।
বিপ্রস্য চার্থে হ্যনৃতং বদেত
পঞ্চানৃতান্যাহুরপাতকানি॥

— বিবাহকালে, রতিসম্বন্ধে, প্রাণসংশয়ে, সর্বস্বনাশের সম্ভাবনায়, এবং ব্রাহ্মণের উপকারার্থে মিথ্যা বলা যেতে পারে; এই পাঁচ অবস্থায় মিথ্যা বললে পাপ হয় না।[১]

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, শিক্ষিত জ্ঞানী লোকে নিদারূণ কর্ম ক’রেও মহৎ পুণ্যের অধিকারী হ’তে পারেন, যেমন বলাক নামক ব্যাধ অন্ধকে হত্যা ক’রে হয়েছিল। আবার, মূঢ় অপণ্ডিত ধর্মকামীও মহাপাপগ্রস্ত হতে পারেন, যেমন কৌশিক হয়েছিলেন।

 পুরাকালে বলাক নামে এক ব্যাধ ছিল, সে বৃথা পশু বধ করত না, কেবল স্ত্রী পুত্র পিতা মাতা প্রভৃতির জীবনযাত্রানির্বাহের জন্যই করত। একদা সে বনে গিয়ে কোনও মৃগ পেলে না, অবশেষে সে দেখলে, একটি শ্বাপদ জলপান করছে। এই পশুর চক্ষু ছিল না, ঘ্রাণশক্তিই তার দৃষ্টির কাজ করত। বলাক সেই অদৃষ্টপূর্ব অন্ধ পশুকে বধ করলে আকাশ থেকে তার মাথায় পুষ্পবৃষ্টি হ’ল। তার পর সেই ব্যাধকে স্বর্গে নিয়ে যাবার জন্য একটি মনোরম বিমান এল, তাতে অপ্সরারা গীতবাদ্য করছিল। অর্জুন, সেই পশু সমস্ত প্রাণী বিনষ্ট ক’রে অভীষ্ট বর পেয়েছিল, কিন্তু ব্রহ্মা তাঁকে অন্ধ করে দেন। সেই সর্বপ্রাণিহিংসক শ্বাপদকে বধ ক’রে বলাক স্বর্গে গিয়েছিল।

 কৌশিক নামে এক ব্রাহ্মণ গ্রামের অদূরে নদীর সংগমস্থলে বাস করতেন। তিনি তপস্বী কিন্তু অল্পজ্ঞ ছিলেন। তাঁর এই ব্রত ছিল যে সর্বদাই সত্য বলবেন, সেজন্য তিনি সত্যবাদী ব’লে বিখ্যাত হয়েছিলেন। একদিন কয়েকজন লোক দস্যুর ভয়ে কৌশিকের তপোবনে আশ্রয় নিলে। দস্যুরা খুঁজতে খুঁজতে কৌশিকের কাছে এসে বললে, ভগবান, কয়েকজন লোক এদিকে এসেছিল, তারা কোন্ পথে গেছে যদি জানেন তো বলুন। সত্যবাদী কৌশিক বললেন, তারা

  1. আদিপর্ব ১২-পরিচ্ছেদে অনুরূপ শ্লোক আছে।