পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৯৫

বহু-বৃক্ষ-লতা-গুল্ম-সমাকীর্ণ এই বনে আশ্রয় নিয়েছে। তখন নিষ্ঠুর দস্যুরা সেই লোকদের খুঁজে বার ক’রে হত্যা করলে। মূঢ় কৌশিক ধর্মের সূক্ষ্ম তত্ত্ব জানতেন না, তিনি তাঁর দুরুক্তির জন্য পাপগ্রস্ত হয়ে কষ্টময় নরকে গিয়েছিলেন।

 উপাখ্যান শেষ ক’রে কৃষ্ণ বললেন, কেউ কেউ তর্ক দ্বারা দুর্বোধ পরমজ্ঞান লাভ করবার চেষ্টা করে, আবার অনেকে বলে ধর্মের তত্ত্ব শ্রুতিতেই আছে। আমি এই দুই মতের কোনওটির দোষ ধরছি না, কিন্তু শ্রুতিতে সমস্ত ধর্মের বিধান নেই, সেজন্য প্রাণিগণের অভ্যুদয়ের নিমিত্ত প্রবচন রচিত হয়েছে।—

যৎ স্যাদহিংসাসংযুক্তং স ধর্ম ইতি নিশ্চয়ঃ।
অহিংসার্থায় ভূতানাং ধর্মপ্রবচনং কৃতম্॥
ধারণাদ্ধর্মমিত্যাহুধর্মো ধারয়তে প্রজাঃ।
যৎ স্যাদ্ধারণসংযুক্তং স ধর্ম ইতি নিশ্চয়ঃ॥

— যে কর্মে হিংসা নেই তা নিশ্চয়ই ধর্ম; প্রাণিগণের অহিংসার নিমিত্ত ধর্মপ্রবচন রচিত হয়েছে। ধারণ (রক্ষা) করে এজন্যই ‘ধর্ম’ বলা হয়; ধর্ম প্রজাগণকে ধারণ করে; যা ধারণ করে তা নিশ্চয়ই ধর্ম।—

অবশ্যং কূজিতব্যে বা শঙ্কেরন্ বাপ্যকূজতঃ।
শ্রেয়স্তত্রানৃতং বক্তুং তৎ সত্যমবিচারিতম্॥

— যেখানে অবশ্যই কিছু বলা প্রয়োজন, না বলা শঙ্কাজনক, সেখানে মিথ্যাই বলা শ্রেয়, সে মিথ্যাকে নির্বিচারে সত্যের সমান গণ্য করতে হবে।

 তার পর কৃষ্ণ বললেন, যদি মিথ্যা শপথ ক’রে দস্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তবে ধর্মতত্ত্বজ্ঞানীরা তাতে অধর্ম দেখতে পান না, কারণ উপায় থাকলে দস্যুকে কখনও ধন দেওয়া উচিত নয়। ধর্মের জন্য মিথ্যা বললে পাপ হয় না। অর্জুন, আমি তোমাকে সত্য-মিথ্যার স্বরূপ বুঝিয়ে দিলাম, এখন বল যুধিষ্ঠিরকে বধ করা উচিত কিনা।

 অর্জুন বললেন, তোমার বাক্য মহাপ্রাজ্ঞ মহামতি পুরুষের যোগ্য, আমাদেরও হিতকর। কৃষ্ণ, তুমি আমাদের মাতার সমান, পিতার সমান, আমাদের পরম গতি। আমি বুঝেছি যে ধর্মরাজ আমার অবধ্য। এখন তুমি আমার সংকল্পের বিষয় শুনে অনুগ্রহ ক’রে উপদেশ দাও। তুমি আমার এই প্রতিজ্ঞা জান— কেউ যদি আমাকে বলে, ‘অপর লোক তোমার চেয়ে অস্ত্রবিদ্যায় বা বীর্যে শ্রেষ্ঠ, তুমি তাকে গাণ্ডীব দাও,’— তবে আমি তাকে বধ করব। ভীমেরও প্রতিজ্ঞা আছে—যে তাঁকে