পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৮
মহাভারত

এখনই যাচ্ছি। সত্য বলছি, আপনার প্রিয়সাধনের জন্যই আমার জীবন। এই বলে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের পাদস্পর্শ ক’রে যুদ্ধযাত্রার জন্য দণ্ডায়মান হলেন। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির শয্যা থেকে উঠে দুঃখিত মনে বললেন, অর্জুন, আমি অসাধু কর্ম করেছি, তার জন্যই তোমরা বিপদ্‌গ্রস্ত হয়েছ। আমি কুলনাশক পুরুষাধম, তুমি আমার শিরশ্ছেদ কর। আমার ন্যায় পাপী মূঢ়বৃদ্ধি অলস ভীরু নিষ্ঠুর পুরুষের অনুসরণ ক’রে তোমাদের কি লাভ হবে? আমি আজই বনে যাব, মহাত্মা ভীমসেনই তোমাদের যোগ্য রাজা, আমার ন্যায় ক্লীবের আবার রাজকার্য কি? তোমার পরুষ বাক্য আমি সইতে পারছি না, অপমানিত হয়ে আমার জীবনধারণের প্রয়োজন নেই।

 অর্জুনের প্রতিজ্ঞারক্ষার বিষয় যুধিষ্ঠিরকে বুঝিয়ে দিয়ে কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, আমি আর অর্জুন আপনার শরণাগত, আমি প্রণত হয়ে প্রার্থনা করছি, ক্ষমা করুন, আজ রণভূমি পাপী কর্ণের রক্ত পান করবে। ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির সসম্ভ্রমে কৃষ্ণকে উঠিয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, গোবিন্দ, আমরা অজ্ঞানে মোহিত হয়েছিলাম, ঘোর বিপৎসাগর থেকে তুমি আমাদের উদ্ধার করেছ।

 অর্জুন সরোদনে যুধিষ্ঠিরের চরণে পড়লেন। ভ্রাতাকে সস্নেহে উঠিয়ে আলিঙ্গন ক’রে যুধিষ্ঠিরও রোদন করতে লাগলেন। তার পর অর্জুন বললেন, মহারাজ, আপনার পাদস্পর্শ ক’রে প্রতিজ্ঞা করছি, আজ কর্ণকে বধ না ক’রে আমি যুদ্ধ থেকে ফিরব না। যুধিষ্ঠির প্রসন্নমনে বললেন, অর্জুন, তুমি যশস্বী হও, অক্ষয় জীবন ও অভীষ্ট লাভ কর, সর্বদা জয়ী হও, তোমার শত্রুর ক্ষয় হ’ক।

১৮। অর্জুন-কর্ণের অভিযান

(সপ্তদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 কৃষ্ণের আজ্ঞায় দারুক অর্জুনের ব্যাঘ্রচর্মাবৃত রথ সজ্জিত করলে। যথাবিধি স্বস্ত্যয়নের পর কৃষ্ণের সহিত অর্জুন সেই রথে উঠে রণভূমির অভিমুখে চললেন। সেই সময়ে সকল দিক নির্মল হ’ল, চাষ (নীলকণ্ঠ), শতপত্র (কাঠঠোকরা) ও ক্রৌঞ্চ (কোঁচ বক) প্রভৃতি শুভসূচক পক্ষী অনেকে প্রদক্ষিণ করতে লাগল। কঙ্ক গৃধ্র বক শ্যেন বায়স প্রভৃতি মাংসাশী পক্ষী খাদ্যের লোভে আগে আগে যেতে লাগল।

 কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, তোমার সমান যোদ্ধা পৃথিবীতে নেই, তথাপি তুমি কর্ণকে অবজ্ঞা করো না। আজ যুদ্ধের সপ্তদশ দিন চলছে, তোমাদের এবং শত্রু-