পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৪৯৯

পক্ষের বিপুল সৈন্যের এখন অল্পই অবশিষ্ট আছে। কৌরবপক্ষে এখন পাঁচ মহারথ জীবিত আছেন — অশ্বত্থামা কৃতবর্মা কর্ণ শল্য ও কৃপ। অশ্বত্থামা তোমার মাননীয় গুরু দ্রোণের পুত্র, কৃপ তোমার আচার্য, কৃতবর্মা তোমার মাতৃকুলের বান্ধব, মহারাজ শল্য তোমার বিমাতার ভ্রাতা, এই কারণে এঁদের উপর তোমার দয়া থাকতে পারে, কিন্তু পাপমতি ক্ষুদ্রাশয় কর্ণকে আজ তুমি সত্বর বধ কর। জতুগৃহদাহ, দ্যূতক্রীড়া, এবং দুর্যোধন তোমাদের উপর যত উৎপীড়ন করেছেন সে সমস্তেরই মূল দরাত্মা কর্ণ। অর্জুন বললেন, গোবিন্দ, ভূতভবিষ্যদ্‌বিৎ তুমি যখন আমার সহায় তখন কর্ণের কথা দূরে থাক, ত্রিলোকের সকলকেই আমি পরলোকে পাঠাতে পারি।

 এই সময়ে ভীম তুমুল যুদ্ধে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি তাঁর সারথি বিশোককে বললেন, আমি সর্বদিকে শত্রুদের রথ ও ধ্বজাগ্র দেখে উদ্‌বিগ্ন হয়েছি। অর্জুন এখনও এলেন না, ধর্মরাজও আহত হয়ে চলে গেছেন। এঁরা জীবিত আছেন কিনা জানি না। যাই হ’ক, এখন আমি শত্রুসৈন্য সংহার করব, তুমি দেখে বল আমার কত বাণ অবশিষ্ট আছে। বিশোক বললে, পাণ্ডুপুত্র, আপনার এত অস্ত্র আছে যে ছয় গোশকট তা বহন করতে পারে না। আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে সহস্র সহস্র অস্ত্র নিক্ষেপ করুন।

 কিছুক্ষণ পরে বিশোক বললে, ভীমসেন, আপনি গাণ্ডীব আকর্ষণের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না? আপনার অভিলাষ পূর্ণ হয়েছে, হস্তিসৈন্যের মধ্য থেকে অর্জুনের ধ্বজাগ্রে ওই ভয়ংকর বানর দেখা যাচ্ছে, তিনি কৌরবসৈন্য বিনষ্ট করতে করতে আপনার কাছে আসছেন। ভীম হৃষ্ট হয়ে বললেন, বিশোক, তুমি যে প্রিয়সংবাদ দিলে তার জন্য আমি তোমাকে চোদ্দটি গ্রাম, এক শ দাসী এবং কুড়িটি রথ দেব।


 অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, পাঞ্চালসৈন্যেরা কর্ণের ভয়ে পালাচ্ছে, তুমি শীঘ্র কর্ণের কাছে রথ নিয়ে চল, নতুবা তিনি পাণ্ডব ও সৃঞ্জয়গণকে নিঃশেষ করবেন। অর্জুনের রথ দেখতে পেয়ে শল্য বললেন, কর্ণ, ওই দেখ অর্জুন আসছেন, তাঁর ভয়ে কৌরবসেনা সর্ব দিকে ধাবিত হচ্ছে, কিন্তু তিনি সমস্ত সৈন্য বর্জন করে তোমার দিকেই আসছেন। রাধেয়, তুমি কৃষ্ণার্জুনকে বধ করতে সমর্থ, তুমি ভীষ্ম দ্রোণ অশ্বত্থামা ও কৃপাচার্যের সমান। আমাদের পক্ষের রাজারা অর্জুনের ভয়ে পালাচ্ছেন,