পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০০
মহাভারত

তুমি ভিন্ন আর কেউ এঁদের ভয় দূর করতে পারবে না। এই যুদ্ধে কৌরবগণ তোমাকেই দ্বীপের ন্যায় আশ্রয় মনে করেন। কর্ণ বললেন, মহারাজ, আপনি এখন প্রকৃতিস্থ হয়েছেন, আমার মনের মত কথা বলছেন, ধনঞ্জয়ের ভয়ও ত্যাগ করেছেন। আজ আমার বাহুবল দেখুন, আমি একাকীই পাণ্ডবগণের মহাচমূ ধ্বংস করব এবং পুরুষব্যাঘ্র কৃষ্ণার্জুনকেও বধ করব। এই দুই বীরকে না মেরে আমি ফিরব না।

 এই সময়ে দুর্যোধন কৃপ কৃতবর্মা শকুনি অশ্বত্থামা প্রভৃতিকে দেখে কর্ণ বললেন, আপনারা সকল দিক থেকে কৃষ্ণার্জুনকে আক্রমণ করুন, তাঁরা পরিশ্রান্ত ও ক্ষতবিক্ষত হ’লে আমি অনায়াসে তাঁদের বধ করব। কর্ণের উপদেশ অনুসারে কৌরবপক্ষীয় মহারথগণ সসৈন্যে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন। অর্জুনের বাণবর্ষণে কৌরবসৈন্য নিষ্পিষ্ট ও বিধ্বস্ত হ’তে লাগল, যারা ভীমের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল তারাও পরাঙ্মুখ হ’ল। কৌরবসৈন্য ভগ্ন হ’লে অর্জুন ভীমের কাছে এলেন এবং তাঁকে যুধিষ্ঠিরের কুশলসংবাদ জানিয়ে অন্যত্র যুদ্ধ করতে গেলেন।

 দুঃশাসনের কনিষ্ঠ দশ জন অর্জুনকে পরিবেষ্টন করলেন, কিন্তু অর্জুন ভল্লের আঘাতে সকলেরই শিরশ্ছেদ করলেন। নব্বই জন সংশপ্তক রথী অর্জুনকে বাধা দিতে এলেন, কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর তাঁরাও নিহত হলেন।

১৯। দুঃশাসনবধ—ভীমের প্রতিজ্ঞাপালন

(সপ্তদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 কর্ণ পাঞ্চালগণের সহিত যুদ্ধ করছিলেন। তাঁর শরাঘাতে ধৃষ্টদ্যুম্নের এক পুত্র নিহত হ’লে কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, পার্থ, কর্ণ পাঞ্চালগণকে নিঃশেষ করছেন, তুমি সত্বর তাঁকে বধ কর। অর্জুন কিছুদূর অগ্রসর হ’লে মহাবীর ভীমসেন পুনর্বার তাঁর সঙ্গে মিলিত হলেন এবং পশ্চাতে থেকে অর্জুনের পৃষ্ঠরক্ষা করতে লাগলেন।

 এই সময়ে দুঃশাসন নির্ভয়ে শরক্ষেপণ করতে করতে ভীমের নিকটস্থ হলেন। হস্তিনী দেখলে দুই মদমত্ত হস্তীর যেমন সংঘর্ষ হয় সেইরূপ ভীম ও দুঃশাসন পরস্পরকে আক্রমণ করলেন। ভীমের শরাঘাতে দুঃশাসনের ধনু ও ধ্বজ ছিন্ন এবং সারথি নিহত হ’ল। তখন দুঃশাসন নিজেই রথ চালাতে লাগলেন এবং অন্য ধনু নিয়ে ভীমকে শরাহত করলেন। বাহু প্রসারিত ক’রে ভীম প্রাণশূন্যের