পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০২
মহাভারত

হ’ল। এখন দ্বিতীয় যজ্ঞপশু দুর্যোধনকেও বলি দেব, এবং কৌরবগণের সমক্ষে সেই দুরাত্মার মস্তক চরণ দিয়ে মর্দন ক’রে শান্তিলাভ করব। এই ব’লে মহাবল ভীমসেন বত্রহন্তা ইন্দ্রের ন্যায় সহর্ষে সিংহনাদ করলেন।

২০। কর্ণবধ

(সপ্তদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 দুঃশাসনবধের পর ভীম ধৃতরাষ্ট্রের আরও দশ পুত্রকে ভল্লের আঘাতে যমালয়ে পাঠালেন। কর্ণপুত্র কৃষসেন প্রবল বিক্রমে পাণ্ডবপক্ষীয় বীরগণের সঙ্গে বহু ক্ষণ যুদ্ধ করে অর্জুনের বাণে নিহত হলেন।

 পুত্রশোকার্ত কর্ণ ক্রোধে রক্তনয়ন হয়ে অর্জুনকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন। ইন্দ্র ও বৃত্রাসুরের ন্যায় অর্জুন ও কর্ণকে যুদ্ধে সমাগত দেখে সমস্ত ভুবন যেন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে দুই বীরের পক্ষপাতী হ’ল। নক্ষত্রসমেত আকাশ ও আদিত্যগণ কর্ণের পক্ষে গেলেন; অসুর রাক্ষস প্রেত পিশাচ, বৈশ্য শূদ্র সূত ও সংকর জাতি, শৃগালকুক্কুরাদি, ক্ষুদ্র সর্প প্রভৃতি কর্ণের পক্ষপাতী হ’ল। বিশালা পৃথিবী, নদী সমুদ্র পর্বত বৃক্ষাদি, উপনিষৎ উপবেদ মন্ত্র ইতিহাসাদি সমেত চতুর্বেদ, বাসুকি প্রভৃতি নাগগণ, মাঙ্গলিক পশুপক্ষী, এবং দেবর্ষি ব্রহ্মর্ষি ও রাজর্ষিগণ অর্জুনের পক্ষ নিলেন।

 ব্রহ্মা মহেশ্বর ও ইন্দ্রাদি দেবগণও যুদ্ধ দেখতে এলেন। ইন্দ্র ও সূর্য নিজ নিজ পুত্রের জয়কামনায় বিবাদ করতে লাগলেন। ব্রহ্মা ও মহেশ্বর বললেন, অর্জুনের জয় হবে তাতে সন্দেহ নেই, কারণ ইনি খাণ্ডবদাহ ক’রে অগ্নিকে তৃপ্ত করেছিলেন, স্বর্গে ইন্দ্রকে সাহায্য করেছিলেন, কিরাতরূপী বৃষধ্বজকে তুষ্ট করেছিলেন, এবং স্বয়ং বিষ্ণু এঁর সারথি। মহাবীর কর্ণ বসুলোকে বা বায়ুলোকে যান, কিংব। ভীষ্ম-দ্রোণের সঙ্গে স্বর্গে থাকুন; কিন্তু কৃষ্ণার্জুনই বিজয়লাভ করুন।

 অর্জুনের ধ্বজস্থিত মহাকপি লম্ফ দিয়ে সবেগে কর্ণের ধ্বজের উপরে পড়ল এবং কর্ণের লাঞ্ছন হস্তিবন্ধনরজ্জুকে আক্রমণ করলে। কৃষ্ণ ও শল্য পরস্পরকে নয়নবাণে বিদ্ধ করতে লাগলেন। অর্জুন বললেন, কৃষ্ণ, আজ তুমি কর্ণপত্নীদের বিধবা দেখবে; ঋণমুক্ত হয়ে অভিমন্যুজননী সুভদ্রা, তোমার পিতৃষ্বসা কুন্তী, বাষ্পমুখী দ্রৌপদী, এবং ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে আজ তুমি সান্ত্বনা দেবে।