পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
মহাভারত

॥সম্ভবপর্বাধ্যায়॥

১১। কচ ও দেবযানী

 জনমেজয়ের অনুরোধে বৈশম্পায়ন কুরুবংশের বৃত্তান্ত আদি থেকে বললেন।— ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ প্রজাপতি তাঁর পঞ্চাশটি কন্যাকে পুত্রতুল্য জ্ঞান করতেন। জ্যেষ্ঠা কন্যা অদিতি থেকে বংশানুক্রমে বিবস্বান (সূর্য), মনু, ইলা, পুরুরবা, আয়ু, নহুষ ও যযাতি উৎপন্ন হন। যযাতি দেবযানীশর্মিষ্ঠাকে বিবাহ করেন।

 ত্রিলোকের ঐশ্বর্যের জন্য যখন দেবাসুরের বিরোধ হয় তখন দেবতারা বৃহস্পতিকে এবং অসুররা শুক্রাচার্যকে পৌরোহিত্যে বরণ করেন। এই দুই ব্রাহ্মণের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, দেবগণ যে সকল দানবকে যুদ্ধে মারতেন শুক্র বিদ্যাবলে তাদের পুনর্জীবিত করতেন। বৃহস্পতি এই বিদ্যা জানতেন না, সেজন্য দেবপক্ষের মৃত সৈন্য বাঁচাতে পারতেন না। দেবতারা বৃহস্পতির পুত্র কচকে বললেন, তুমি অসুররাজ বৃষপর্বার কাছে যাও, সেখানে শুক্রাচার্যকে দেখতে পাবে। শুক্রের প্রিয়কন্যা দেবযানীকে যদি সন্তুষ্ট করতে পার তবে তুমি নিশ্চয় মৃতসঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ করবে। কচ শুক্রের কাছে গিয়ে বললেন, আমি অঙ্গিরা ঋষির পৌত্র,, বৃহস্পতির পুত্র, আমাকে শিষ্য করুন, সহস্র বৎসর আমি আপনার কাছে থাকব। শুক্র সম্মত হলেন। গুরু ও গুরুকন্যার সেবা ক’রে কচ ব্রহচর্য পালন করতে লাগলেন। তিনি গীত নৃত্য বাদ্য ক’রে এবং পুষ্প ফল উপহার দিয়ে প্রাপ্তযৌবনা দেবযানীকে তুষ্ট করতেন। সুগায়ক সুবেশ প্রিয়বাদী রূপবান মাল্যধারী পুরুষকে নারীরা স্বভাবত কামনা করে, সেজন্য দেবযানীও নির্জন স্থানে কচের কাছে গান গাইতেন এবং তাঁর পরিচর্যা করতেন।

 এইরূপে পাঁচ শ বৎসর গত হ’লে দানবরা কচের অভিসন্ধি বুঝতে পারলে। একদিন কচ যখন বনে গরু চরাচ্ছিলেন তখন তারা তাঁর দেহ খণ্ড খণ্ড ক’রে কুকুরকে দিলে। কচ ফিরে এলেন না দেখে দেবযানী বললেন, পিতা, আপনার হোম শেষ হয়েছে, সূর্য অস্ত গেছে, গরুর পালও ফিরেছে, কিন্তু কচকে দেখছি না। নিশ্চয় তিনি হত হয়েছেন। আমি সত্য বলছি, কচ বিনা আমি বাঁচব না। শুক্র তখন সঞ্জীবনী বিদ্যা প্রয়োগ ক’রে কচকে আহ্বান করলেন। কচ তখনই কুকুরদের শরীর ভেদ ক’রে হষ্টচিত্তে উপস্থিত হলেন এবং দেবযানীকে জানালেন যে দানবরা তাঁকে