পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৫০৩

 কর্ণ ও অর্জুন পরস্পরের প্রতি নানাপ্রকার ভয়ানক মহাস্ত্র নিক্ষেপ করতে লাগলেন। উভয়পক্ষের হস্তী অশ্ব রথ ও পদাতি বিধ্বস্ত হয়ে সর্বদিকে ধাবিত হ’ল। অর্জুনের শরাঘাতে অসংখ্য কৌরবযোদ্ধা প্রাণত্যাগ করলেন। তখন অশ্বত্থামা দুর্যোধনের হাত ধ’রে বললেন, দুর্যোধন, প্রসন্ন হও, পাণ্ডবদের সঙ্গে বিরোধ ত্যাগ কর, যুদ্ধকে ধিক। আমি বারণ করলে অর্জুন নিবৃত্ত হবেন, কৃষ্ণও বিরোধ ইচ্ছা করেন না। সন্ধি করলে পাণ্ডবরা সর্বদাই তোমার অনুগত হয়ে থাকবেন। তুমি যদি শান্তি কামনা কর তবে আমি কর্ণকেও নিরস্ত করব।

 দুর্যোধন দুঃখিতমনে নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, সখা, তোমার কথা সত্য, কিন্তু দুর্মতি ভীম ব্যাঘ্রের ন্যায় দুঃশাসনকে বধ ক’রে যা বলেছে তা আমার হৃদয়ে গ্রথিত হয়ে আছে, তুমিও তা শুনেছ, অতএব শান্তি কি ক’রে হবে? পূর্বের বহু শত্রুতা স্মরণ ক’রে পাণ্ডবরা আমাকে বিশ্বাস করবে না। কর্ণকেও তোমার বারণ করা উচিত নয়। আজ অর্জুন অত্যন্ত শ্রান্ত হয়ে আছে, কর্ণ বলপ্রয়োগে তাকে বধ করবেন।

 অর্জুন ও কর্ণ আগ্নেয় বারুণ বায়ব্য প্রভৃতি নানা অস্ত্র পরস্পরের প্রতি নিক্ষেপ করতে লাগলেন। অর্জুনের ঐন্দ্রাস্ত্র কর্ণের ভার্গবাস্ত্রে প্রতিহত হয়েছে দেখে ভীমসেন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তোমার সমক্ষেই পাপী সূতপুত্রের বাণে বহু পাঞ্চাল বীর কেন নিহত হলেন? তুমিই বা তার দশটা বাণে বিদ্ধ হ’লে কেন? তুমি যদি না পার তবে আমিই তাকে গদাঘাতে বধ করব। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন, আজ তোমার সকল অস্ত্র কর্ণের অস্ত্রে নিবারিত হচ্ছে কেন? তুমি কি মোহগ্রস্ত হয়েছ তাই কৌরবদের আনন্দধ্বনি শুনতে পাচ্ছ না? যে ধৈর্য বলে তুমি রাক্ষস ও অসুরদের সংহার করেছিলে সেই ধৈর্যবলে আজ তুমি কর্ণকেও বধ কর। নতুবা আমার ক্ষুরধার সুদর্শনচক্র দিয়ে শত্রুর মুণ্ডচ্ছেদ কর।

 অর্জুন বললেন, কৃষ্ণ, সূতপত্রের বধ এবং লোকের মঙ্গলের নিমিত্ত আমি এক উগ্র মহাস্ত্র প্রয়োগ করব; তুমি অনুমতি দাও, দেবগণও অনুমতি দিন। এই ব’লে অর্জুন ব্রহ্মাকে নমস্কার ক’রে শত্রুর অসহ্য ব্রাহ্ম অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, কিন্তু কর্ণ বাণবর্ষণ ক’রে সেই অস্ত্র প্রতিহত করলেন। ভীমের উপদেশে অর্জুন আর এক ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। তা থেকে শত শত শূল পরশু চক্র নারাচ নির্গত হয়ে শত্রুসৈন্য বধ করতে লাগল। এই সময়ে যুধিষ্ঠির সুবর্ণ বর্ম ধারণ ক’রে কর্ণার্জুনের যুদ্ধ দেখতে এলেন; ভিষগ্‌গণের মন্ত্র ও ঔষধের গুণে তিনি শল্যমুক্ত ও বেদনাশূন্য হয়েছিলেন।