পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০৪
মহাভারত

 অত্যন্ত আকর্ষণ করায় অর্জুনের গাণ্ডীবধনুর গুণ ছিন্ন হ’ল, সেই অবসরে কর্ণ এক শত ক্ষুদ্রক বাণে অর্জুনকে আচ্ছন্ন করলেন এবং কৃষ্ণকেও ষাটটি নারাচ দিয়ে বিদ্ধ করলেন। কৃষ্ণার্জুন পরাভূত হয়েছেন মনে ক’রে কৌরবসৈন্য করতলধ্বনি ও সিংহনাদ করতে লাগল। গাণ্ডীবে নূতন গুণ পরিয়ে অর্জুন ক্ষণকালমধ্যে বাণে বাণে অন্ধকার ক’রে ফেললেন এবং কর্ণ শল্য ও সমস্ত কৌরবযোদ্ধাকে বিদ্ধ করে কর্ণের চক্ররক্ষক পাদরক্ষক অগ্ররক্ষক ও পৃষ্ঠরক্ষক যোদ্ধাদের বিনষ্ট করলেন। হতাবশিষ্ট কৌরববীরগণ কর্ণকে ফেলে পালাতে লাগলেন, দুর্যোধনের অনুরোধেও তাঁরা রইলেন না।

 খাণ্ডবদাহের সময় অর্জুন যার মাতাকে বধ করেছিলেন সেই তক্ষকপুত্র অশ্বসেন[১] এতদিন পাতালে শুয়েছিল। রথ অশ্ব ও হস্তীর মর্দনে ভূতল কম্পিত হওয়ায় অশ্বসেন উঠে পড়ল এবং মাতৃবধের প্রতিশোধ নেবার জন্য শররূপ ধারণ ক’রে কর্ণের তূণে প্রবিষ্ট হ’ল। ইন্দ্র ও লোকপালগণ হাহাকার ক’রে উঠলেন। কর্ণ না জেনেই সেই শর তাঁর ধনুতে যোগ করলেন। শল্য বললেন, এই শরে অর্জনের গ্রীবা ছিন্ন হবে না, তুমি এমন শর সন্ধান কর যাতে তাঁর শিরশ্ছেদ হয়। কর্ণ বললেন, আমি দুবার শরসন্ধান করি না,— এই ব’লে তিনি শর মোচন করলেন। সেই ভীমদর্শন অত্যুজ্জ্বল শর সশব্দে নির্গত হয়ে যেন সীমন্ত রচনা ক’রে আকাশপথে জ্বলতে জ্বলতে যেতে লাগল। তখন কংসরিপু মাধব অবলীলাক্রমে তাঁর পায়ের চাপে অর্জুনের রথ মাটিতে এক হাত[২] বসিয়ে দিলেন, রথের চার অশ্ব জানু দ্বারা ভূমি স্পর্শ করলে। নাগবাণের আঘাতে অর্জুনের জগদ্‌বিখ্যাত স্বর্ণকিরীট দগ্ধ হয়ে মস্তক থেকে প’ড়ে গেল।

 শররূপী মহানাগ অশ্বসেন পুনর্বার কর্ণের তূণে প্রবেশ করতে গেল। কর্ণের প্রশ্নের উত্তরে সে বললে, তুমি না দেখেই আমাকে মোচন করেছিলে সেজন্য অর্জুনের মস্তক হরণ করতে পারি নি; আবার লক্ষ্য ক’রে আমাকে নিক্ষেপ কর, তোমার আর আমার শত্রুকে বধ করব। অশ্বসেনের ইতিহাস শুনে কর্ণ বললেন, অন্যের শক্তি অবলম্বন ক’রে আমি জয়ী হতে চাই না; নাগ, যদি শত অর্জুনকেও বধ করা যায়, তথাপি এই শর আমি পুনর্বার প্রয়োগ করব না, অতএব তুমি প্রসন্ন হয়ে চ’লে যাও। তখন অশ্বসেন অর্জুনকে মারবার জন্য নিজেই ধাবিত হ’ল। কৃষ্ণ অর্জুনকে বললেন, তুমি এই মহানাগকে বধ কর, খাণ্ডবদাহ কালে তুমি এর শত্রুতা


  1. আদিপর্ব ৪০-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।
  2. মূলে আছে ‘কিঙ্কুমাত্রম্’, তার অর্থ এক হাত বা এক বিঘত।