পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্ণপর্ব
৫০৭

২১। দুর্যোধনের বিষাদ—যুধিষ্ঠিরের হর্ষ

(সপ্তদশ দিনের যুদ্ধান্ত)

 হতবুদ্ধি দুঃখার্ত শল্য দুর্যোধনের কাছে এসে বললেন, ভরতনন্দন, আজ কর্ণ ও অর্জুনের যে যুদ্ধ হয়েছে তেমন আর কখনও হয় নি। দৈবই পাণ্ডবদের রক্ষা করেছেন এবং আমাদের বিনষ্ট করেছেন। শল্যের কথা শুনে দুর্যোধন নিজের দুর্নীতির বিষয় চিন্তা ক’রে এবং শোকে অচেতনপ্রায় হয়ে বার বার নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। তার পর তিনি সারথিকে রথ চালাবার আদেশ দিয়ে বললেন, আজ আমি কৃষ্ণ অর্জুন ভীম ও অবশিষ্ট শত্রুদের বধ ক’রে কর্ণের কাছে ঋণমুক্ত হব।

 রথ অশ্ব ও গজ বিহীন পঁচিশ হাজার কৌরবপক্ষীয় পদাতি সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হ’ল। ভীমসেন ও ধৃষ্টদ্যুম্ন চতুরঙ্গ বল নিয়ে তাদের আক্রমণ করলেন। পদাতি সৈন্যের সঙ্গে ধর্মানুসারে যুদ্ধ করবার ইচ্ছায় ভীম রথ থেকে নামলেন এবং বৃহৎ গদা নিয়ে দণ্ডপাণি যমের ন্যায় সৈন্য বধ করতে লাগলেন। অর্জুন নকুল সহদেব ও সাত্যকিও যুদ্ধে রত হলেন। কৌরবসৈন্য ভগ্ন হয়ে পালাতে লাগল। তখন দুর্যোধন আশ্চর্য পৌরুষ দেখিয়ে একাকী সমস্ত পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। তিনি স্বপক্ষের পলায়মান যোদ্ধাদের বললেন, ক্ষত্রিয়গণ, শোন, পৃথিবীতে বা পর্বতে এমন স্থান নেই যেখানে গেলে তোমরা পাণ্ডবদের হাত থেকে নিস্তার পাবে। ওদের সৈন্য অল্পই অবশিষ্ট আছে, কৃষ্ণার্জুনও ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন, আমরা সকলে এখানে থাকলে নিশ্চয় আমাদের জয় হবে। কালান্তক যম সাহসী ও ভীরু উভয়কেই বধ করেন, তবে ক্ষত্রিয়ব্রতধারী কোন্ মূঢ় যুদ্ধ ত্যাগ করে? তোমরা পালালে নিশ্চয় ক্রুদ্ধশত্রু ভীমের হাতে পড়বে, তার চেয়ে যুদ্ধে নিহত হয়ে স্বর্গলাভ করা শ্রেয়।

 সৈন্যেরা দুর্যোধনের কথা না শুনে পালাতে লাগল। তখন ভীত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় মদ্ররাজ শল্য দুর্যোধনকে বললেন, আমাদের অসংখ্য রথ অশ্ব গজ ও সৈন্য বিনষ্ট হয়ে এই রণভূমিতে প’ড়ে আছে। দুর্যোধন, নিবৃত্ত হও, সৈন্যেরা ফিরে যাক, তুমিও শিবিরে যাও, দিবাকর অস্তে যাচ্ছেন। রাজা, তুমিই এই লোকক্ষয়ের কারণ। দুর্যোধন ‘হা কর্ণ, হা কর্ণ’ ব’লে অশ্রুপাত করতে লাগলেন। অশ্বত্থামা প্রভৃতি যোদ্ধারা দুর্যোধনকে বার বার আশ্বাস দিলেন এবং নর-অশ্ব-মাতঙ্গের রক্তে সিক্ত রণভূমি দেখতে দেখতে শিবিরে প্রস্থান করলেন। ভক্তবৎসল