পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১০
মহাভারত

দর্প ত্যাগ ক’রে সর্বদা দাসীর ন্যায় দ্রৌপদীর সেবা করেন। এইসকল কারণে এবং বিশেষত অভিমন্যুবধের ফলে যে বৈরানল প্রজ্বলিত হয়েছে তা নির্বাপিত হয় নি, অতএব কি ক’রে পাণ্ডবদের সঙ্গে সন্ধি হবে? সাগরাম্বরা পৃথিবীর রাজা হয়ে আমি কি ক’রে পাণ্ডবদের প্রসাদে রাজ্য ভোগ করব, দাসের ন্যায় যুধিষ্ঠিরের পিছনে যাব, আত্মীয়দের সঙ্গে দীনভাবে জীবিকানির্বাহ করব? এখন ক্লীবের ন্যায় আচরণের সময় নয়, আমাদের যুদ্ধ করাই উচিত। যে বীরগণ আমার জন্য নিহত হয়েছেন তাঁদের উপকার স্মরণ ক’রে এবং তাঁদের ঋণ শোধের বাসনায় আমার রাজ্যের প্রতিও আর রুচি নেই। পিতামহ ভ্রাতা ও বয়স্যগণকে নিপাতিত ক’রে যদি আমি নিজের জীবন রক্ষা করি তবে লোকে নিশ্চয় আমার নিন্দা করবে। আমি যুধিষ্ঠিরকে প্রণিপাত ক’রে রাজ্যলাভ করতে চাই না, বরং ন্যায়যুদ্ধে হত হয়ে স্বর্গলাভ করব।

 দুর্যোধনের কথা শুনে ক্ষত্রিয়গণ প্রশংসা ক’রে সাধু সাধু বলতে লাগলেন এবং পরাজয়ের জন্য শোক না ক’রে যুদ্ধের নিমিত্ত ব্যগ্র হলেন। তার পর তাঁরা বাহনদের পরিচর্যা ক’রে হিমালয়ের নিকটবর্তী বৃক্ষহীন সমতল প্রদেশে গেলেন এবং অরুণবর্ণ সরস্বতী নদীতে স্নান ও তার জল পান করলেন। সেখানে কিছুকাল থেকে তাঁরা দুর্যোধন কর্তৃক উৎসাহিত হ’য়ে রাত্রিবাসের জন্য শিবিরে ফিরে এলেন।

২। শল্যের সেনাপতিত্বে অভিষেক

 কৌরবপক্ষীয় বীরগণ দুর্যোধনকে বললেন, মহারাজ, আপনি সেনাপতি নিযুক্ত ক’রে যুদ্ধ করুন, আমরা তৎকর্তৃক রক্ষিত হয়ে শত্রু জয় করব। দুর্যোধন রথারোহণে অশ্বত্থামার কাছে গেলেন — যিনি তেজে সূর্যতুল্য, বুদ্ধিতে বৃহস্পতিতুল্য, যাঁর পিতা অযোনিজ এবং মাতাও অযোনিজা, যিনি রূপে অনুপম, সর্ববিদ্যার পারগামী এবং গুণের সাগর। দুর্যোধন তাঁকে বললেন, গুরু পুত্র, এখন আপনিই আমাদের পরমগতি, আদেশ করুন কে আমাদের সেনাপতি হবেন।

 অশ্বত্থামা বললেন, শল্যের কুল রূপ তেজ যশ শ্রী ও সর্বপ্রকার গুণই আছে, ইনিই আমাদের সেনাপতি হ’ন। এই কৃতজ্ঞ নরপতি নিজের ভাগিনেয়দের ত্যাগ ক’রে আমাদের পক্ষে এসেছেন। ইনি মহাসেনার অধীশ্বর এবং দ্বিতীয় কার্তিকের ন্যায় মহাবাহু। দুর্যোধন ভূমিতে দাঁড়িয়ে কৃতাঞ্জলি হয়ে রথস্থ শল্যকে বললেন, মিত্রবৎসল, মিত্র ও শত্রু পরীক্ষা করবার সময় উপস্থিত হয়েছে, আপনি আমাদের সেনার অগ্রে থেকে নেতৃত্ব করুন, আপনি রণস্থলে গেলে মন্দমতি পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণ এবং