পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারত
৫১১

তাদের অমাত্যবর্গ নিরুদ্যম হবে। মদ্রাধিপ শল্য উত্তর দিলেন, কুরুরাজ, তুমি আমাকে দিয়ে যা করাতে চাও আমি তাই করব, আমার রাজ্য ধন প্রাণ সবই তোমার প্রিয়সাধনের জন্য। দুর্যোধন বললেন, বীরশ্রেষ্ঠ অতুলনীয় মাতুল, আপনাকে সেনাপতিত্বে বরণ করছি, কার্তিক যেমন দেবগণকে রক্ষা করেছিলেন সেইরূপ আপনি আমাদের রক্ষা করুন। শল্য বললেন, দুর্যোধন, শোন — কৃষ্ণ আর অর্জুনকে তুমি রথিশ্রেষ্ঠ মনে কর, কিন্তু তাঁরা বাহুবলে কিছুতেই আমার তুল্য নন। আমি ক্রুদ্ধ হ’লে সুরাসুর ও মানব সমেত সমস্ত পৃথিবীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারি, পাণ্ডবরা তো দূরের কথা। আমি সেনাপতি হয়ে জয়লাভ করব এতে সন্দেহ নেই।

 দুর্যোধন শল্যকে যথাবিধি সেনাপতির পদে অভিষিক্ত করলেন। সৈন্যেরা সিংহনাদ করে উঠল, নানাপ্রকার বাদ্যধ্বনি হ’ল, কৌরব ও মদ্রদেশীয় যোদ্ধারা হৃষ্ট হয়ে শল্যের স্তুতি করতে লাগলেন। সকলে সেই রাত্রিতে সুখে নিদ্রা গেলেন।


 পাণ্ডবশিবিরে যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন, মাধব, দুর্যোধন মহাধনুর্ধর শল্যকে সেনাপতি করেছেন। তুমিই আমাদের নেতা ও রক্ষক, অতএব এখন যা কর্তব্য তার ব্যবস্থা কর। কৃষ্ণ বললেন, ভরতনন্দন, আমি শল্যকে জানি, তিনি ভীষ্ম দ্রোণ ও কর্ণের সমান অথবা তাঁদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। শল্যের বল ভীম অর্জুন সাত্যকি ধৃষ্টদ্যুম্ন ও শিখণ্ডীর অপেক্ষা অধিক। পুরুষশ্রেষ্ঠ, আপনি বিক্রমে শার্দূলতুল্য, আপনি ভিন্ন অন্য পুরুষ পৃথিবীতে নেই যিনি যুদ্ধে মদ্ররাজকে বধ করতে পারেন। তিনি সম্পর্কে মাতুল এই ভেবে দয়া করবেন না, ক্ষত্রধর্মকে অগ্রগণ্য ক’রে শল্যকে বধ করুন। ভীষ্ম-দ্রোণ-কর্ণরূপ সাগর উত্তীর্ণ হ’য়ে এখন শল্য-রূপ গোষ্পদে নিমজ্জিত হবেন না। এইপ্রকার উপদেশ দিয়ে কৃষ্ণ সায়ংকালে তাঁর শিবিরে প্রস্থান করলেন। কর্ণবধে আনন্দিত পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণ সেই রাত্রিতে সুখে নিদ্রা গেলেন।

৩। শল্যবধ

(অষ্টাদশ দিনের যুদ্ধ)

 পরদিন প্রভাতে কৃপ কৃতবর্মা অশ্বত্থামা শল্য শকুনি প্রভৃতি দুর্যোধনের সঙ্গে মিলিত হয়ে এই নিয়ম করলেন যে তাঁরা কেউ একাকী পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধে করবেন না, পরস্পরকে রক্ষা করে মিলিত হয়েই যুদ্ধ করবেন। শল্য সর্বতোভদ্র