পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
২৭

বধ করেছিল। তার পর আবার একদিন দানবরা কচকে হত্যা করলে এবং শুক্র তাঁকে বাঁচিয়ে দিলেন।

 তৃতীয় বারে দানবরা কচকে দগ্ধ ক’রে তাঁর ভস্ম সুরার সঙ্গে মিশিয়ে শুক্রকে খাওয়ালে। কচকে না দেখে দেবযানী বিলাপ করতে লাগলেন। শুক্র বললেন, অসুরেরা তাকে বার বার বধ করছে, আমরা কি করব। তুমি শোক ক’রো না। দেবযানী সরোদনে বললেন, পিতা, বৃহস্পতিপুত্র ব্রহ্মচারী কর্মদক্ষ কচ আমার প্রিয়, আমি তাঁকেই অনুসরণ করব। তখন শুক্র পূর্বের ন্যায় কচকে আহ্বান করলেন। গুরুর জঠরের ভিতর থেকে কচ বললেন, ভগবান, প্রসন্ন হন, আমি অভিবাদন করছি, আমাকে পুত্র জ্ঞান করুন। অসুররা আমাকে ভস্ম ক’রে সুরার সঙ্গে মিশিয়ে আপনাকে খাইয়েছে। শুক্র দেবযানীকে বললেন, তুমি কিসে সুখী হবে বল, আমার উদর বিদীর্ণ না হ’লে কচকে দেখতে পাবে না, আমি না মরলে কচ বাঁচবে না। দেবযানী বললেন, আপনার আর কচের মৃত্যু দুইই আমার পক্ষে সমান, আপনাদের কারও মৃত্যু হ’লে আমি বাঁচব না। তখন শুক্র বললেন, বৃহস্পতির পুত্র, তুমি সিদ্ধিলাভ করেছ, দেবযানী তোমাকে স্নেহ করে। যদি তুমি কচরূপী ইন্দ্র না হও তবে আমার সঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ কর। বৎস, তুমি পুত্ররূপে আমার উদর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিও, গুরুর নিকট বিদ্যা লাভ ক’রে তোমার যেন ধর্মবুদ্ধি হয়।

 শুক্রের দেহ বিদীর্ণ ক’রে কচ বেরিয়ে এলেন এবং নবলব্ধ বিদ্যার দ্বারা তাঁকে পুনর্জীবিত করে বললেন, আপনি বিদ্যাহীন শিষ্যের কর্ণে বিদ্যামৃত দান করেছেন, আপনাকে আমি পিতা ও মাতা জ্ঞান করি। শুক্র গাত্রোত্থান ক’রে সুরাপানের প্রতি এই অভিশাপ দিলেন—যে মন্দমতি ব্রাহ্মণ মোহবশে সুরাপান করবে সে ধর্মহীন ও ব্রহ্মহত্যাকারীর তুল্য পাপী হবে। তার পর দানবগণকে বললেন, তোমরা নির্বোধ, কচ সঞ্জীবনী বিদ্যায় সিদ্ধ হয়ে আমার তুল্য প্রভাবশালী হয়েছেন, তিনি আমার কাছেই বাস করবেন।

 সহস্র বৎসর অতীত হ’লে কচ স্বর্গলোকে ফিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন। দেবযানী তাঁকে বললেন, অঙ্গিরার পৌত্র, তুমি বিদ্যা কুলশীল তপস্যা ও সংযমে অলংকৃত, তোমার পিতা আমার মাননীয়। তোমার ব্রতপালনকালে আমি তোমার পরিচর্যা করেছি। এখন তোমার শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে, আমি তোমার প্রতি অনুরক্ত, তুমি আমাকে বিবাহ কর। কচ উত্তর দিলেন, ভদ্রে, তুমি আমার গুরুপুত্রী, তোমার পিতার তুল্যই আমার পূজনীয়, অতএব ও কথা ব’লো না। দেবযানী বললেন, কচ,