পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১৪
মহাভারত

হয়েছেন এবং মদ্রদেশীয় মহারথগণ ধর্মরাজকে পীড়িত করছেন শুনে অর্জুন সত্বর সেখানে এলেন, ভীম নকুল সহদেব সাত্যকি প্রভৃতিও যুধিষ্ঠিরকে রক্ষা করবার জন্য বেষ্টন করলেন। পাণ্ডবগণের আক্রমণে মদ্রবীরগণ বিনষ্ট হলেন, তখন দুর্যোধনের সমস্ত সৈন্য ভীত ও চঞ্চল হয়ে পালাতে লাগল। বিজয়ী পাণ্ডবগণ শঙ্খধ্বনি ও সিংহনাদ করতে লাগলেন।

৪। শাল্ববধ

(অষ্টাদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 মধ্যাহ্ণকালে যুধিষ্ঠির শল্যকে বধ করলেন, কৌরবসেনাও পরাজিত হয়ে যুদ্ধে পরাঙ্‌মুখ হ’ল। পাণ্ডব ও পাঞ্চাল সৈন্যগণ বলতে লাগল, আজ ধৈর্যশালী যুধিষ্ঠির জয়ী হলেন, দুর্যোধন রাজশ্রীহীন হলেন। আজ ধৃতরাষ্ট্র পুত্রের মৃত্যুসংবাদ শুনবেন এবং শোকাকুল হয়ে ভূমিতে প’ড়ে নিজের পাপ স্বীকার করবেন। আজ থেকে দুর্যোধন দাস হয়ে পাণ্ডবদের সেবা করবেন এবং তাঁরা যে দুঃখ পেয়েছেন তা বুঝবেন। যুধিষ্ঠির ভীমার্জুন নকুল-সহদেব, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী ও দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র যে পক্ষের যোদ্ধা সে পক্ষের জয় হবে না কেন? জগন্নাথ জনার্দন কৃষ্ণ যাঁদের প্রভু, যাঁরা ধর্মকে আশ্রয় করেছেন, সেই পাণ্ডবদের জয় হবে না কেন?

 ভীমসেনের ভয়ে ব্যাকুল হয়ে কৌরবসৈন্য পালাচ্ছে দেখে দুর্যোধন তাঁর সারথিকে বললেন, তুমি ওই সৈন্যদের পশ্চাতে ধীরে ধীরে রথ নিয়ে চল, আমি রণস্থলে থেকে যুদ্ধ করলে আমার সৈন্যেরা সাহস পেয়ে ফিরে আসবে। সারথি রথ নিয়ে চলল, তখন হস্তী অশ্ব ও রথবিহীন একুশ হাজার পদাতি এবং নানাদেশজাত বহু যোদ্ধা প্রাণের মায়া ত্যাগ ক’রে পুনর্বার যুদ্ধে প্রবৃত্ত হ’ল। ভীমসেন তাঁর স্বর্ণমণ্ডিত বৃহৎ গদার আঘাতে সকলকেই নিষ্পেষিত করলেন। দুর্যোধন তাঁর পক্ষের অবশিষ্ট সৈন্যদের উৎসাহ দিতে লাগলেন, তারা বার বার ফিরে এসে যুদ্ধে রত হ’ল, কিন্তু প্রতি বারেই বিধ্বস্ত হয়ে পালাল।

 দুর্যোধনের একটি মহাবংশজাত প্রিয় হস্তী ছিল, গজশাস্ত্রজ্ঞ লোকে তার পরিচর্যা করত। ম্লেচ্ছাধিপতি শাল্ব সেই পর্বতাকার হস্তীতে চ’ড়ে যুদ্ধ করতে এলেন এবং প্রচণ্ড বাণবর্ষণ ক’রে পাণ্ডবসৈন্যদের যমালয়ে পাঠাতে লাগলেন। সকলে দেখলে, সেই বিশাল হস্তী একাই যেন বহু সহস্র হয়ে সর্বত্র বিচরণ করছে। পাণ্ডব-