পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শল্যপর্ব
৫১৫

সেনা বিমর্দিত হ’য়ে পালাতে লাগল। তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন বেগে ধাবিত হয়ে বহু নারাচ নিক্ষেপ ক’রে সেই হস্তীকে বিদ্ধ করলেন। শাল্ব অঙ্কুশ প্রহার ক’রে হস্তীকে ধৃষ্টদ্যুম্নের রথের দিকে চালিয়ে দিলেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন ভয় পেয়ে রথ থেকে নেমে পড়লেন, তখন সেই হস্তী শুণ্ড দ্বারা অশ্ব ও সারথি সমেত রথ তুলে নিয়ে ভূতলে ফেলে নিষ্পেষিত করলে। ভীম শিখণ্ডী ও সাত্যকি শরাঘাতে হস্তীকে বাধা দেবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু তাকে থামাতে পারলেন না। বীর ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁর পর্বতশৃঙ্গাকার গদা দিয়ে হস্তীর কুম্ভদেশে (মস্তকপার্শ্বস্থ দুই মাংসপিণ্ডে) প্রচণ্ড আঘাত করলেন। আর্তনাদ ও রক্তবমন ক’রে সেই গজেন্দ্র ভূপতিত হ’ল, তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন ভল্লের আঘাতে শাল্বের শিরশ্ছেদ করলেন।

৫। উলূক-শকুনি-বধ

(অষ্টাদশ দিনের আরও যুদ্ধ)

 মহাবীর শাল্ব নিহত হ’লে কৌরবসৈন্য আবার ভগ্ন হ’ল। রুদ্রের ন্যায় প্রতাপবান দুর্যোধন তথাপি অদম্য উৎসাহে বাণবর্ষণ করতে লাগলেন, পাণ্ডবগণ মিলিত হয়েও তাঁর সম্মুখে দাঁড়াতে পারলেন না। অশ্বত্থামা শকুনি উলূক এবং কৃপাচার্যও পাণ্ডবদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগলেন। দুর্যোধনের আদেশে সাত শ রথী যুধিষ্ঠিরকে আক্রমণ করলেন, কিন্তু পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণের হস্তে তাঁরা নিহত হলেন। তার পর নানা দিকে বিশৃঙ্খল ভাবে যুদ্ধ হ’তে লাগল। গান্ধাররাজ শকুনি দশ হাজার প্রাসধারী অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে এলেন, কিন্তু তাঁর বহু সৈন্য নিহত হ’ল। ধৃষ্টদ্যুম্ন দুর্যোধনের অশ্ব ও সারথি বিনষ্ট করলেন, তখন দুর্যোধন একটি অশ্বের পৃষ্ঠে চ’ড়ে শকুনির কাছে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে অশ্বত্থামা কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা তাঁদের রথারোহী যোদ্ধাদের ত্যাগ ক’রে শকুনি-দুর্যোধনের সঙ্গে মিলিত হলেন।

 ব্যাসদেবের বরে সঞ্জয় দিব্যচক্ষু লাভ ক’রে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে উপস্থিত থাকতেন এবং প্রতিদিন যুদ্ধশেষে ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধবৃত্তান্ত জানাতেন[১]। কৌরবসৈন্য ক্ষীণ এবং শত্রুসৈন্য বেষ্টিত হয়েছে দেখে সঞ্জয় ও চার জন যোদ্ধা প্রাণের মায়া ত্যাগ ক’রে ধৃষ্টদ্যুম্নের সৈন্যদের সঙ্গে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলেন, কিন্তু


  1. ভীষ্মপর্ব ২-পরিচ্ছেদ দ্রষ্টব্য।