পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১৬
মহাভারত

অর্জুনের বাণে নিপীড়িত হয়ে অবশেষে যুদ্ধে বিরত হলেন। সাত্যকির প্রহারে সঞ্জয়ের বর্ম বিদীর্ণ হ’ল, তিনি মূর্ছিত হলেন, তখন সাত্যকি তাঁকে বন্দী করলেন।

 দুর্মর্ষণ শ্রুতান্ত জৈত্র প্রভৃতি ধৃতরাষ্ট্রের দ্বাদশ পুত্র ভীমসেনের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধ করলেন, কিন্তু সকলেই নিহত হলেন। অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন, ভীমসেন ধৃতরাষ্ট্রের সকল পুত্রকেই বধ করেছেন, যে দুজন (দুর্যোধন ও সন্দর্শন) অবশিষ্ট আছে তারাও আজ নিহত হবে। শকুনির পাঁচ শত অশ্ব, দুই শত রথ, এক শত গজ ও এক সহস্র পদাতি, এবং কৌরবপক্ষে অশ্বত্থামা কৃপ সুশর্মা শকুনি উলূক ও কৃতবর্মা এই ছ’জন বীর অবশিষ্ট আছেন; দুর্যোধনের এর অধিক বল নেই। মূঢ় দুর্যোধন যদি যুদ্ধ থেকে না পালায় তবে তাকে নিহত ব’লেই জানবে।

 তার পর অর্জুন ত্রিগর্তদেশীয় সত্যকর্মা সত্যেষু সুশর্মা, সুশর্মার পঁয়তাল্লিশ জন পুত্র, এবং তাঁদের অনুচরদের বিনষ্ট করলেন। দুর্যোধনভ্রাতা সুদর্শন ভীমসেন কর্তৃক নিহত হলেন। শকুনি, তাঁর পত্রে উলূক, এবং তাঁদের চরগণ মৃত্যুপণ ক’রে পাণ্ডবদের প্রতি ধাবিত হলেন। সহদেব ভল্লের আঘাতে উলূকের শিরশ্ছেদ করলেন। শকুনি সাশ্রুকণ্ঠে সাশ্রুনয়নে যুদ্ধ করতে লাগলেন এবং একটি ভীষণ শক্তি অস্ত্র সহদেবের প্রতি নিক্ষেপ করলেন। সহদেব বাণদ্বারা সেই শক্তি ছেদন ক’রে ভল্লের আঘাতে শকুনির মস্তক দেহচ্যুত করলেন। শকুনির অনুচরগণও অর্জুনের হস্তে নিহত হ’ল।


॥ হ্রদপ্রবেশপর্বাধ্যায়॥

৬। দুর্যোধনের হ্রদপ্রবেশ

 হতাবশিষ্ট কৌরবসৈন্য দুর্যোধনের বাক্যে উৎসাহিত হয়ে পুনর্বার যুদ্ধে রত হ’ল, কিন্তু পাণ্ডবসৈন্যের আক্রমণে তারা একবারে নিঃশেষ হয়ে গেল। দুর্যোধনের একাদশ অক্ষৌহিণী সেনা ধ্বংস হ’ল। পাণ্ডবসেনার দু হাজার রথ, সাত শ হস্তী, পাঁচ হাজার অশ্ব ও দশ হাজার পদাতি অবশিষ্ট রইল। দুর্যোধন যখন দেখলেন যে তাঁর সহায় কেউ নেই তখন তিনি তাঁর নিহত অশ্ব পরিত্যাগ ক’রে, একাকী গদাহস্তে দ্রুতবেগে পূর্বমুখে প্রস্থান করলেন।

 সঞ্জয়কে দেখে ধৃষ্টদ্যুম্ন সহাস্যে সাত্যকিকে বললেন, একে বন্দী ক’রে কি