পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১৮
মহাভারত

পূর্বে রাজপুরীতে যেসকল নারীকে সূর্যও দেখতে পেতেন না, তাঁদের এখন সকলেই দেখতে লাগল।

 বৈশ্যাগর্ভজাত ধৃতরাষ্ট্রপুত্র যুযুৎসু যিনি পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিয়েছিলেন, তিনিও যুধিষ্ঠিরের অনুমতি নিয়ে রাজভার্যাদের সঙ্গে প্রস্থান করলেন। হস্তিনাপুরে এসে যুযুৎসু বিদুরকে সকল বৃত্তান্ত জানালেন। বিদুর বললেন, বৎস, কৌরবকুলের এই ক্ষয়কালে তুমি এখানে এনে উপযুক্ত কার্যই করেছ। হতভাগ্য অন্ধরাজের তুমিই এখন একমাত্র অবলম্বন। আজ বিশ্রাম ক’রে কাল তুমি যধিষ্ঠিরের কাছে ফিরে যেয়ো।

৭। যুধিষ্ঠিরের তর্জন

 পাণ্ডবগণ অনেক অন্বেষণ ক’রেও দুর্যোধনকে কোথাও দেখতে পেলেন না। তাঁদের বাহনসকল পরিশ্রান্ত হ’লে তাঁরা সৈন্য সহ শিবিরে চ’লে গেলেন। তখন কৃপ অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মা ধীরে ধীরে হ্রদের কাছে গিয়ে বললেন, রাজা, ওঠ, আমাদের সহিত মিলিত হয়ে যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে যুদ্ধ কর। জয়ী হয়ে পৃথিবী ভোগ কর অথবা হত হয়ে স্বর্গলাভ কর। দুর্যোধন বললেন, ভাগ্যক্রমে আপনাদের জীবিত দেখছি। আপনারা পরিশ্রান্ত হয়েছেন, আমিও ক্ষতবিক্ষত হয়েছি; এখন যুদ্ধে করতে ইচ্ছা করি না, বিশ্রাম ক’রে ক্লান্তিহীন হয়ে শত্রুজয় করব। বীরগণ, আপনাদের মহৎ অন্তঃকরণ এবং আমার প্রতি পরম অনুরাগ আশ্চর্য নয়। আজ রাত্রে বিশ্রাম ক’রে কাল আমি নিশ্চয় আপনাদের সহিত মিলিত হয়ে যুদ্ধ করব। অশ্বত্থামা বললেন, রাজা, ওঠ, আমি শপথ করছি আজই সোমক ও পাঞ্চালগণকে বধ করব।

 এই সময়ে কয়েকজন ব্যাধ মাংসভারবহনে শ্রান্ত হয়ে জলপানের জন্য হ্রদের নিকটে উপস্থিত হ’ল। এরা প্রত্যহ ভীমসেনকে মাংস এনে দিত। ব্যাধরা অন্তরাল থেকে দুর্যোধন অশ্বত্থামা প্রভৃতির সমস্ত কথা শুনলে। পূর্বে যুধিষ্ঠির এদের কাছে দুর্যোধন সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছিলেন। দুর্যোধন হ্রদের মধ্যে লুকিয়ে আছেন জানতে পেরে তারা পাণ্ডবশিবিরে গেল। দ্বাররক্ষীরা তাদের বাধা দিলে, কিন্তু ভীমের আদেশে তারা শিবিরে প্রবেশ ক’রে তাঁকে সব কথা বলল। ভীম তাদের প্রচুর অর্থ দিলেন এবং যুধিষ্ঠির প্রভৃতিকে দুর্যোধনের সংবাদ জানালেন। তখন পাণ্ডবগণ রথারোহণে সদলে সাগরতুল্য বিশাল দ্বৈপায়ন হ্রদের নিকট উপস্থিত হলেন। শঙ্খনাদ, রথের ঘর্ঘর ও সৈন্যদের কোলাহল শুনে কৃপাচার্য অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মা