পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২০
মহাভারত

 দুর্যোধনের করুণ বাক্য শুনে যুধিষ্ঠির বললেন, বৎস, মাংসাশী পক্ষীর রবের ন্যায় তোমার এই আর্ত—প্রলাপ আমার ভাল লাগছে না। তুমি সমস্ত পৃথিবী দান করলেও আমি নিতে চাই না, তোমাকে যুদ্ধে পরাজিত ক’রেই আমি এই বসুধা ভোগ করতে ইচ্ছা করি। তুমি এখন রাজ্যের অধীশ্বর নও, তবে দান করতে চাচ্ছ কেন? যখন আমরা ধর্মানুসারে শান্তিকামনায় রাজ্য চেয়েছিলাম তখন দাও নি কেন? মহাবল কৃষ্ণ যখন সন্ধির প্রার্থনা করেছিলেন তখন তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিলে, এখন তোমার চিত্তবিভ্রম হ’ল কেন? সূচীর অগ্রে যেটকু ভূমি ধরে তাও তুমি দিতে চাও নি, এখন সমস্ত পৃথিবী ছেড়ে দিচ্ছ কেন? পাপী, তোমার জীবন এখন আমার হাতে। তুমি আমাদের বহু অনিষ্ট করেছ তুমি জীবনধারণের যোগ্য নও; এখন উঠে যুদ্ধ কর।


॥গদাযুদ্ধপর্বাধ্যায়॥

৮। গদাযুদ্ধের উপক্রম

 দুর্যোধন পূর্বে কখনও ভর্ৎসনা শোনেন নি, সকলের কাছেই তিনি রাজসম্মান পেতেন। ছত্রের ছায়া এবং সূর্যের অল্প কিরণেও যাঁর কষ্ট হ’ত, সমস্ত লোক যাঁর প্রসাদের উপর নির্ভর করত, এখন অসহায় সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে যুধিষ্ঠিরের কটুবাক্য শুনতে হ’ল। দুর্যোধন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে হাত নেড়ে বললেন, রাজা, আপনাদের সুহৃৎ রথ বাহন সবই আছে; আমি একাকী, শোকার্ত, রথবাহনহীন। আপনারা সশস্ত্র, রথারোহী এবং বহু; যদি আপনারা সকলে আমাকে বেষ্টন করেন তবে নিরস্ত্র পাদচারী একাকী আমি কি ক’রে যুদ্ধ করব? আপনারা একে একে আমার সঙ্গে যুদ্ধ করুন। রাত্রিশেষে সূর্য যেমন সমস্ত নক্ষত্র বিনষ্ট করেন, আমিও সেইরূপ নিরস্ত্র ও রথহীন হয়েও নিজের তেজে রথ ও অশ্ব সমেত আপনাদের সকলকেই বিনষ্ট করব।

 যুধিষ্ঠির বললেন, মহাবাহু সুযোধন, ভাগ্যক্রমে তুমি ক্ষত্রধর্ম বুঝেছ এবং তোমার যুদ্ধে মতি হয়েছে। তুমি বীর এবং যুদ্ধ করতেও জান। মনোমত অস্ত্র নিয়ে তুমি আমাদের এক এক জনের সঙ্গেই যুদ্ধ কর, আমরা আর সকলে দর্শক হয়ে থাকব। আমি তোমার ইষ্টের জন্য আরও বলছি, তুমি আমাদের মধ্যে কেবল একজনকে বধ করলেই কুরুরাজ্য লাভ করবে; আর যদি নিহত হও তবে স্বর্গে