পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২২
মহাভারত

এমন মানুষ বা দেবতা আমি দেখি না। আপনারা কেউ ন্যায়যুদ্ধে দুর্যোধনকে জয় করতে পারবেন না। পাণ্ডু ও কুন্তীর পুত্রগণ নিশ্চয়ই রাজ্যভোগের জন্য সৃষ্ট হন নি, দীর্ঘকাল বনবাস ও ভিক্ষার জন্যই সৃষ্ট হয়েছেন।

 ভীম বললেন, মধুসূদন, তুমি বিষণ্ণ হয়ো না, আজ আমি দুর্যোধনকে বধ করব তাতে সন্দেহ নেই। আমার গদা দুর্যোধনের গদার চেয়ে দেড় গুণ ভারী, অতএব তুমি দুঃখ করো না। দুর্যোধনের কথা দূরে থাক, আমি দেবগণ এবং ত্রিলোকের সকলের সঙ্গেই যুদ্ধ করতে পারি। বাসুদেব হৃষ্ট হয়ে বললেন, মহাবাহু, আপনাকে আশ্রয় ক’রেই ধর্মরাজ শত্রুহীন হয়ে রাজলক্ষী লাভ করবেন তাতে সন্দেহ নেই। বিষ্ণু যেমন দানবসংহার ক’রে শচীপতি ইন্দ্রকে স্বর্গরাজ্য দিয়েছিলেন, আপনিও সেইরূপ দুর্যোধনকে বধ করে ধর্মরাজকে সসাগরা পৃথিবী দিন।

 ভীম গদাহস্তে দণ্ডায়মান হয়ে দুর্যোধনকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন। মত্ত হস্তী যেমন মত্ত হস্তীর অভিমুখে যায়, দুর্যোধন সেইরূপ ভীমের কাছে গেলেন। ভীম তাঁকে বললেন, রাজা ধৃতরাষ্ট্র আর তুমি যেসব দুষ্কৃত করেছ তা এখন স্মরণ কর। দুরাত্মা, তুমি সভামধ্যে রজস্বলা দ্রৌপদীকে কষ্ট দিয়েছিলে, শকুনির বুদ্ধিতে যুধিষ্ঠিরকে দ্যূতক্রীড়ায় জয় করেছিলে, নিরপরাধ পাণ্ডবদের প্রতি বহু দুর্ব্যবহার করেছিলে, তার মহৎ ফল এখন দেখ। তোমার জন্যই আমাদের পিতামহ ভীষ্ম শরশয্যায় প’ড়ে আছেন, দ্রোণ কর্ণ শল্য শকুনি, তোমার বীর ভ্রাতা ও পুত্রেরা, এবং তোমার পক্ষের রাজারা সসৈন্যে নিহত হয়েছেন। কুলঘ্ন পুরুষাধম একমাত্র তুমিই এখন অবশিষ্ট আছ, আজ তোমাকে গদাঘাতে বধ করব তাতে সন্দেহ নেই।

 দুর্যোধন বললেন, বৃকোদর, আত্মশ্লাঘা ক’রে কি হবে, আমার সঙ্গে যুদ্ধ কর, তোমার যুদ্ধপ্রীতি আজ দূর করব। পাপী, কোন্ শত্রু আজ ন্যায়যুদ্ধে আমাকে জয় করতে পারবে? ইন্দ্রও পারবেন না। কুন্তীপুত্র, শরৎকালীন মেঘের ন্যায় বৃথা গর্জন ক’রো না, তোমার যত বল আছে তা আজ যুদ্ধে দেখাও।

 এই সময়ে হলায়ুধ বলরাম সেখানে উপস্থিত হলেন; তিনি সংবাদ পেয়েছিলেন যে দুর্যোধন ও ভীম যুদ্ধে উদ্যত হয়েছেন। কৃষ্ণ ও পাণ্ডবগণ তাঁকে যথাবিধি অর্চনা ক’রে বললেন, আপনি আপনার দুই শিষ্যের যুদ্ধকৌশল দেখুন। বলরাম বললেন, কৃষ্ণ, আমি পুষ্যা নক্ষত্রে দ্বারকা ত্যাগ করেছি, তার পর বিয়াল্লিশ দিন গত হয়েছে, এখন শ্রবণা নক্ষত্রে এখানে এসেছি। এই বলে নীলবসন শুভ্রকান্তি