পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
মহাভারত

তুমি আমার পিতার গুরুপুত্রের পুত্র, আমার পিতার পুত্র নও। তুমিও আমার পূজ্য ও মান্য। অসুররা তোমাকে বার বার বধ করেছিল, তখন থেকে তোমার উপর আমার প্রীতি জন্মেছে। তুমি জান তোমার প্রতি আমার সৌহার্দ্য অনুরাগ আর ভক্তি আছে, তুমি আমাকে বিনা দোষে প্রত্যাখ্যান করতে পার না।

 কচ বললেন, দেবযানী, প্রসন্ন হও, তুমি আমার কাছে গুরুরও অধিক। চন্দ্রনিভাননী, তোমার যেখানে উৎপত্তি, শত্রুাচার্যের সেই দেহের মধ্যে আমিও বাস করেছি। ধর্মত তুমি আমার ভগিনী, অতএব আর ওরূপ কথা ব’লো না। তোমাদের গৃহে আমি সুখে বাস করেছি, এখন যাবার অনুমতি দাও, আশীর্বাদ কর যেন পথে আমার মঙ্গল হয়। মধ্যে মধ্যে ধর্মের অবিরোধে[১] আমাকে স্মরণ ক’রো, সাবধানে আমার গুরুদেবের সেবা ক’রো।

 দেবযানী বললেন, কচ, যদি আমার প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান কর তবে তোমার বিদ্যা ফলবতী হবে না। কচ উত্তর দিলেন, তুমি আমার গুরুপুত্রী, গুরুও সম্মতি দেন নি, সেজন্যই প্রত্যাখ্যান করছি। আমি ধর্মসংগত কথাই বলেছি, তথাপি তুমি কামের বশে আমাকে অভিশাপ দিলে। তোমার যে কামনা তাও সিদ্ধ হবে না, কোনও ঋষিপুত্র তোমাকে বিবাহ করবেন না। তুমি বলেছ, আমার বিদ্যা নিষ্ফল হবে; তাই হ’ক। আমি যাকে শেখাব তার বিদ্যা ফলবতী হবে। এই কথা ব’লে কচ ইন্দ্রলোকে প্রস্থান করলেন।

১২। দেবযানী, শর্মিষ্ঠা ও যযাতি

 কচ ফিরে এলে দেবতারা আনন্দিত হয়ে সঞ্জীবনী বিদ্যা শিখলেন, তার পর ইন্দ্র অসুরগণের বিরুদ্ধে অভিযান করলেন। এক রমণীয় বনে কতকগুলি কন্যা জলকেলি করছে দেখে ইন্দ্র বায়ুর রূপ ধ’রে তাদের বস্ত্রগুলি মিশিয়ে দিলেন। সেই কন্যাদের মধ্যে অসুরপতি বৃষপর্বার কন্যা শর্মিষ্ঠা ছিলেন, তিনি ভ্রমক্রমে দেবযানীর বস্ত্র পরলেন।

 দেবযানী বললেন, অসুরী, আমার শিষ্যা হয়ে তুই আমার কাপড় নিলি কেন? তুই সদাচারহীনা, তোর ভাল হবে না। শর্মিষ্ঠা বললেন, তোর পিতা বিনীত হয়ে নীচে বসে স্তুতিপাঠকের ন্যায় আমার পিতার স্তব করেন। তুই যাচকের কন্যা, আমি দাতার কন্যা।—

  1. অর্থাৎ প্রণয়িভাবে নয়, ভ্রাতৃভাবে।