পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শল্যপর্ব
৫২৩

বলরাম সকলকে যথাযোগ্য সম্মাননা আলিঙ্গন ও কুশলপ্রশ্ন ক'রে যুদ্ধ দেখবার জন্য উপবিষ্ট হলেন।

৯। বলরামের তীর্থভ্রমণ—চন্দ্রের যক্ষ্মা—একত দ্বিত ত্রিত

 জনমেজয় বৈশম্পায়নকে বললেন, বলরাম পূর্বে কৃষ্ণকে বলেছিলেন যে তিনি ধৃতরাষ্ট্রপুত্র বা পাণ্ডুপুত্র কাকেও সাহায্য করবেন না, ইচ্ছানুসারে দেশভ্রমণ করবেন; তবে আবার তিনি কুরুক্ষেত্রে কেন এলেন? বৈশম্পায়ন বললেন, কৃতবর্মা যখন যাদবসৈন্য নিয়ে দুর্যোধনের পক্ষে গেলেন এবং কৃষ্ণ ও সাত্যকি পাণ্ডবপক্ষে গেলেন, তখন বলরাম ক্রুদ্ধ হয়ে তীর্থযাত্রায় নির্গত হলেন। তিনি বহু সুবর্ণ রজত বস্ত্র অশ্ব হস্তী রথ গর্দভ উষ্ট্র প্রভৃতি সঙ্গে নিলেন, ঋত্বিক ও ব্রাহ্মণগণও তাঁর সঙ্গে যাত্রা করলেন। বলরাম সমুদ্র থেকে সরস্বতী নদীর স্রোতের বিপরীত দিকে যেতে লাগলেন এবং দেশে দেশে শ্রান্ত ও ক্লান্ত, শিশু ও বৃদ্ধ বহু লোককে এবং ব্রাহ্মণগণকে খাদ্য পানীয় ধনরত্ন ধেনু যানবাহন প্রভৃতি দান করলেন।

 বলরাম প্রথমে পবিত্র প্রভাসতীর্থে গেলেন। পুরাকালে প্রজাপতি দক্ষ চন্দ্রকে তাঁর সাতাশ কন্যা (নক্ষত্র) দান করেছিলেন। এই কন্যারা সকলেই অতুলনীয় রূপবতী ছিলেন, কিন্তু চন্দ্র সর্বদা রোহিণীর সঙ্গেই বাস করতেন। দক্ষের অন্য কন্যারা রুষ্ট হয়ে দক্ষের কাছে অভিযোগ করলেন। দক্ষ বহু বার চন্দ্রকে বললেন, তুমি সকল ভার্যার সহিত সমান ব্যবহার করবে; কিন্তু চন্দ্র তা শুনলেন না। তখন দক্ষের অভিশাপে চন্দ্র যক্ষা রোগে আক্রান্ত হলেন। চন্দ্রের ক্ষয় দেখে দেবতারা দক্ষকে বললেন, ভগবান, প্রসন্ন হ’ন, আপনার শাপে চন্দ্র ক্ষীণ হচ্ছেন, তার ফলে লতা ওষধি বীজ এবং প্রজাগণও ক্ষীণ হচ্ছে, আমরাও ক্ষীণ হচ্ছি। দক্ষ বললেন, আমার বাক্যের প্রত্যাহার হবে না। চন্দ্র সকল ভার্যার সঙ্গে সমান ব্যবহার করুন, সরস্বতী নদীর প্রধান তীর্থ প্রভাসে অবগাহন করুন, তার পর পুনর্বার বৃদ্ধিলাভ করবেন; কিন্তু মাসার্ধকাল তাঁর নিত্য ক্ষয় হবে এবং মাসার্ধকাল নিত্য বৃদ্ধি হবে। চন্দ্র পশ্চিম সমুদ্রে সরস্বতীর সংগমস্থলে গিয়ে বিষ্ণুর আরাধনা করুন তা হ’লে কান্তি ফিরে পানে। চন্দ্র প্রভাসতীর্থে গেলেন এবং অমাবস্যায় অবগাহন ক’রে ক্রমশ তাঁর শীতল কিরণ ফিরে পেলেন। তদবধি তিনি প্রতি