পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শল্যপর্ব
৫২৫

নিত্য দেবতা ব্রাহ্মণ ও অতিথির পূজা করতেন এবং সর্বদা ব্রহ্মচর্যে ও ধর্মকার্যে রত থাকতেন। একদা ভিক্ষু জৈগীষব্য মুনি দেবলের আশ্রমে এলেন এবং যোগনিরত হয়ে সেখানেই বাস করতে লাগলেন। তিনি কেবল ভোজনকালে দেবলের নিকট উপস্থিত হতেন। দীর্ঘকাল পরে একদিন দেবল জৈগীষব্যকে দেখতে পেলেন না। দেবল ভাবলেন, আমি বহু বৎসর এই অলস ভিক্ষুর সেবা করেছি, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে কোনও আলাপ করেন নি। আকাশচারী দেবল একটি কলস নিয়ে মহাসমুদ্রে গেলেন এবং দেখলেন, জৈগীষব্য পূর্বেই সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। দেবল বিস্মিত হলেন এবং স্নানাদির পর জলপূর্ণ কলস নিয়ে আশ্রমে ফিরে এসে দেখলেন, জৈগীষব্য নীরবে কাষ্ঠের ন্যায় ব’সে আছেন। মন্ত্রজ্ঞ দেবল ভিক্ষু জৈগীষব্যের শক্তি পরীক্ষার জন্য আকাশে উঠলেন এবং দেখলেন, অন্তরীক্ষচারী সিদ্ধগণ জৈগীষব্যের পূজা করছেন। তার পর তিনি দেখলেন, জৈগীষব্য স্বর্গলোক পিতৃলোক যমলোক চন্দ্রলোক প্রভৃতি স্থানে এবং বহুবিধ যজ্ঞকারীদের লোকে গেলেন এবং অবশেষে অন্তর্হিত হলেন। দেবল জিজ্ঞাসা করলে সিদ্ধ যাজ্ঞিকগণ বললেন, জৈগীষব্য শাশ্বত ব্রহ্মলোকে গেছেন, সেখানে তোমার যাবার শক্তি নেই। দেবল তাঁর আশ্রমে ফিরে এলেন এবং সেখানে জৈগীষব্যকে দেখলেন। দেবল বিনয়ে অবনত হয়ে সেই মহামুনিকে বললেন, ভগবান, আমি মোক্ষধর্ম শিখতে ইচ্ছা করি। জৈগীষব্য যোগের বিধি এবং শাস্ত্রানুযায়ী কার্যাকার্য সম্বন্ধে উপদেশ দিলেন। দেবল সন্ন্যাসগ্রহণের সংকল্প করলেন, তখন আশ্রমের সমস্ত প্রাণী, পিতৃগণ, এবং ফলমূল লতা প্রভৃতি সরোদনে বলতে লাগল, ক্ষুদ্র দুর্মতি দেবল সর্বভূতকে অভয় দিয়েছিল তা ভুলে গেছে, সে নিশ্চয় আমাদের ছেদন করবে। মুনিসত্তম দেবল ভাবতে লাগলেন, মোক্ষধর্ম আর গার্হস্থ্যধর্মের মধ্যে কোনটি শ্রেয়স্কর; অবশেষে তিনি মোক্ষধর্মই গ্রহণ ক’রে সিদ্ধিলাভ করলেন।

 বৃহস্পতিকে পুরোবর্তী ক’রে দেবগণ ও তপস্বিগণ উপস্থিত হলেন এবং জৈগীষব্য ও দেবলের তপস্যার প্রশংসা করলেন। কিন্তু নারদ বললেন, জৈগীষব্যের তপস্যা বৃথা, কারণ তিনি তাঁর শক্তি দেখিয়ে দেবলকে বিস্মিত করেছেন। দেবতারা বললেন, দেবর্ষি, এমন কথা বলবেন না, মহাত্মা জৈগীষব্যের তুল্য প্রভাব তপস্যা ও যোগসিদ্ধি আর কারও নেই।


 তার পর বলরাম সোমতীর্থ দেখে সারস্বত মুনির তীর্থে গেলেন।