পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২৬
মহাভারত

পুরাকালে সরস্বতীতীরে তপস্যারত দধীচি মুনি অলম্বুষা অপ্সরাকে দেখে বিচলিত হন, তার ফলে সরস্বতী নদীর গর্ভে তাঁর একটি পুত্র উৎপন্ন হয়। প্রসবের পর সরস্বতী দধীচিকে সেই পুত্র দান করলেন। দধীচি তুষ্ট হয়ে সরস্বতীকে বর দিলেন, তোমার জলে তর্পণ করলে দেবগণ পিতৃগণ গন্ধর্বগণ ও অপ্সরোগণ তৃপ্ত হবেন এবং সমস্ত পুণ্যনদীর মধ্যে তুমি পুণ্যতমা হবে। দধীচি তাঁর পুত্রের নাম রাখলেন সারস্বত। এই সময়ে দেবদানবের বিরোধ চলছিল। দধীচি দেবগণের হিতার্থে প্রাণত্যাগ ক’রে তাঁর অস্থি দান করলেন, তাতে বজ্র চক্র গদা প্রভৃতি দিব্যাস্থ নির্মিত হ’ল এবং ইন্দ্র বজ্রাঘাতে দানবগণকে জয় করলেন।

 কিছুকাল পরে স্বাদশবর্ষব্যাপী ভয়ংকর অনাবৃষ্টি হ’ল, মহর্ষিগণ ক্ষুধার্ত হয়ে প্রাণরক্ষার জন্য নানাদিকে ধাবিত হলেন। সারস্বত মুনিও যাবার ইচ্ছা করলেন, কিন্তু সরস্বতী তাঁকে বললেন, পুত্র, যেয়ো না, তোমার আহারের জন্য আমি উত্তম মৎস্য দেব। সারস্বত তাঁর আশ্রমেই রইলেন এবং মৎস্যভোজনে প্রাণধারণ ক’রে দেবতা ও পিতৃগণের তর্পণ এবং বেদচর্চা করতে লাগলেন। অনাবৃষ্টি অতীত হ’লে মহর্ষিগণ দেখলেন তাঁরা বেদবিদ্যা ভুলে গেছেন। তাঁরা সারস্বত মুনির কাছে গিয়ে বললেন, আমাদের বেদ পড়াও। সারস্বত বললেন, আপনারা যথাবিধি আমার শিষ্য হ’ন। মহর্ষিরা বললেন, পুত্র, তুমি তো বালক। সারস্বত বললেন, যাঁরা অবিধিপূর্বক অধ্যয়ন ও অধ্যাপন করেন তাঁরা উভয়েই পতিত এবং পরস্পরের শত্রু হন। বয়স পক্ককেশ বিত্ত বা বন্ধুবাহুল্য থাকলেই লোকে বড় হয় না, যিনি বেদজ্ঞ তিনিই গুরু হবার যোগ্য। তখন ষাট হাজার মুনি সারস্বতের শিষ্যত্ব স্বীকার করলেন।

১১। বৃদ্ধকন্যা সুভ্রূ—কুরুক্ষেত্র ও সমন্তপঞ্চক

 তার পর বলরাম বৃদ্ধকন্যাশ্রম তীর্থে এলেন। কুণিগর্গ নামে এক মহাতপা ঋষি ছিলেন, তিনি সুভ্রূ নামে এক মানসী কন্যা উৎপন্ন করেছিলেন। কুণিগর্গ দেহত্যাগ করলে অনিন্দিতা সন্দরী সুভ্রূ আশ্রম নির্মাণ ক’রে কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন। বহুকাল পরে তিনি নিজেকে কৃতার্থ মনে করলেন, কিন্তু বার্ধক্য ও তপস্যার জন্য তিনি এমন কৃশ হয়ে গিয়েছিলেন যে এক পাও চলতে পারতেন না। তখন তিনি পরলোকগমনের ইচ্ছা করলেন। নারদ তাঁর কাছে এসে বললেন, অবিবাহিতা কন্যার স্বর্গলাভ কি ক’রে হবে? তুমি কঠোর তপস্যা করেছ কিন্তু স্বর্গলোকের অধিকার পাও নি। সুভ্রূ ঋষিগণের কাছে গিয়ে বললেন, যিনি আমার