পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শল্যপর্ব
৫২৭

পাণিগ্রহণ করবেন তাঁকে আমার তপস্যার অর্ধভাগ দান করব। গালবের পুত্র প্রাক্‌শৃঙ্গবান বললেন, সুন্দরী, তুমি যদি আমার সঙ্গে এক রাত্রি বাস কর তবে তোমার পাণিগ্রহণ করব। সুভ্রূ সম্মত হ’লে গালবপুত্র যথাবিধি হোম ক’রে তাঁকে বিবাহ করলেন। সুভ্রূ দিব্যাভরণভূষিতা দিব্যমাল্যধারিণী বরবর্ণিনী তরুণী হয়ে পতির সহিত রাত্রিবাস করলেন। প্রভাতকালে তিনি বললেন, ব্রাহ্মণ, তুমি যে নিয়ম (শর্ত) করেছিলে তা আামি পালন করেছি; তোমার মঙ্গল হ’ক, এখন আমি যাব। গালবপুত্র সম্মতি দিলে সুভ্রূ আবার বললেন, এই তীর্থে যে দেবগণের তর্পণ ক’রে একরাত্রি বাস করবে সে আটান্ন বৎসর ব্রহ্মচর্য পালনের ফল লাভ করবে। এই বলে সাধ্বী সুভ্রূ দেহত্যাগ ক’রে স্বর্গে চলে গেলেন। গালবপুত্র তাঁর ভার্যার তপস্যার অর্ধভাগ পেয়েছিলেন; শোকে কাতর হয়ে তিনিও রূপবতী সুভ্রূর অনুসরণ করলেন।

 তার পর বলরাম সমন্তপঞ্চকে এলেন। ঋষিরা তাঁকে কুরুক্ষেত্রের এই ইতিহাস বললেন।—পুরাকালে রাজর্ষি কুরু সেই স্থান সর্বদা কর্ষণ করেন দেখে ইন্দ্র তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, রাজা, একি করছ? কুরু বললেন, এই ক্ষেত্রে যে মরবে সে পাপশূন্য পুণ্যময় লোকে যাবে। ইন্দ্র উপহাস ক’রে চ’লে গেলেন এবং তার পর বহুবার এসে পূর্বের ন্যায় প্রশ্ন ও উপহাস করতে লাগলেন। দেবতারা ইন্দ্রকে বললেন, রাজর্ষি কুরুকে বর দিয়ে নিবৃত্ত করুন; মানুষ যদি কুরুক্ষেত্রে মরলেই স্বর্গে যেতে পারে তবে আমরা আর যজ্ঞভাগ পাব না। ইন্দ্র কুরুর কাছে এসে বললেন, রাজা, আর পরিশ্রম ক’রো না, আমার কথা শোন। যে লোক এখানে উপবাস ক’রে প্রাণত্যাগ করবে অথবা যুদ্ধে নিহত হবে সে স্বর্গে যাবে। কুরু বললেন, তাই হ’ক।

 ঋষিরা বলরামকে আরও বললেন, ব্রহ্মাদি সুরশ্রেষ্ঠগণ এবং পুণ্যবান রাজর্ষিগণের মতে কুরুক্ষেত্র অপেক্ষা পুণ্যস্থান পৃথিবীতে নেই। দেবরাজ ইন্দ্র এই গাথা গান করেছিলেন — কুরুক্ষেত্রে যে ধূলি ওড়ে তার স্পর্শেও পাপীরা পরমগতি পায়। তারন্তুক অরন্তুক রামহ্রদ ও মচক্রকের মধ্যস্থানকেই কুরুক্ষেত্রের সমন্তপঞ্চক ও প্রজাপতির উত্তরবেদী বলা হয়।


 তার পর বলরাম হিমালয়ের নিকটস্থ তীর্থসকল দেখে মিত্রাবরুণের পুণ্য