পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২৮
মহাভারত

আশ্রমে এলেন এবং সেখানে ঋষি ও সিদ্ধগণের নিকট বিবিধ পবিত্র উপাখ্যান শুনলেন। সেই সময়ে জটামণ্ডলে আবৃত স্বর্ণকৌপীনধারী নৃত্যগীতকুশল কলহপ্রিয় দেবর্ষি নারদ কচ্ছপী বীণা নিয়ে উপস্থিত হলেন। বলরাম নারদের মুখে কুরুক্ষেত্রযুদ্ধের বৃত্তান্ত এবং দুর্যোধন ও ভীমের আসন্ন যুদ্ধের সংবাদ শুনলেন। তখন তিনি তাঁর অনুচরবর্গকে বিদায় দিয়ে বার বার পবিত্র সরস্বতী নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং দুই শিষ্যের যুদ্ধ দেখবার জন্য সত্বর রথারোহণে দ্বৈপায়ন হ্রদের নিকট উপস্থিত হলেন।

১২। দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ

(অষ্টাদশ দিনের যুদ্ধান্ত)

 বলরাম যুধিষ্ঠিরকে বললেন, নৃপশ্রেষ্ঠ, আমি ঋষিদের কাছে শুনেছি যে কুরুক্ষেত্র অতি পুণ্যময় স্বর্গপ্রদ স্থান, সেখানে যাঁরা যুদ্ধে নিহত হন তাঁরা ইন্দ্রের সহিত স্বর্গে বাস করেন। অতএব এখান থেকে সমন্তপঞ্চকে[১] চলুন, সেই স্থান প্রজাপতির উত্তরবেদী ব’লে প্রসিদ্ধ। তখন যুধিষ্ঠিরাদি ও দুর্যোধন পদব্রজে গিয়ে সরস্বতীর দক্ষিণ তীরে একটি পবিত্র উন্মুক্ত স্থানে উপস্থিত হলেন।

 অনন্তর দুর্যোধন ও ভীম পরস্পরকে যুদ্ধে আহ্বান করলেন এবং দুই বৃষের ন্যায় গর্জন ক’রে উন্মত্তবৎ আস্ফালন করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ বাগ্‌যুদ্ধের পর তুমুল গদাযুদ্ধ আরম্ভ হ’ল। দুই বীর পরস্পরের ছিদ্রানুসন্ধান ক’রে প্রহার করতে লাগলেন। বিচিত্র গতিতে মণ্ডলাকারে ভ্রমণ করে, এগিয়ে গিযে, পিছনে হ’টে, একবার নীচু হয়ে, একবার লাফিয়ে উঠে তাঁরা নানাপ্রকার যুদ্ধকৌশল দেখালেন। দুর্যোধন তাঁর গদা ঘরিয়ে ভীমের মাথায় আঘাত করলেন; ভীম অবিচলিত থেকে প্রত্যাঘাত করলেন, কিন্তু দুর্যোধন ক্ষিপ্রগতিতে স’রে গিয়ে ভীমের প্রহার ব্যর্থ ক’রে দিলেন। তার পর ভীম বক্ষে আহত হ’য়ে মূর্ছিতপ্রায় হলেন এবং কিছুক্ষণ পরে প্রকৃতিস্থ হ’য়ে দুর্যোধনের পার্শ্বে প্রহার করলেন। দুর্যোধন বিহ্বল হ’য়ে হাঁটু গেড়ে ব’সে পড়লেন এবং আবার উঠে গদাঘাতে ভীমকে ভূপাতিত করলেন। ভীমের বর্ম বিদীর্ণ হ’ল; মুহূর্তকাল পরে তিনি দাঁড়িয়ে উঠে তাঁর রক্তাক্ত মুখ


  1. দ্বৈপায়ন হ্রদ কুরুক্ষেত্রের অন্তর্গত নয়; সমন্তপঞ্চক কুরুক্ষেত্রেরই অংশ।