পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শল্যপর্ব
৫২৯

মুছলেন। তখন নকুল সহদেব ধৃষ্টদ্যুম্ন ও সাত্যকি দুর্যোধনের দিকে ধাবিত হলেন। ভীম তাঁদের নিবৃত্ত ক’রে পুনর্বার দুর্যোধনকে আক্রমণ করলেন।

 যুদ্ধ ক্রমশ দারুণ হচ্ছে দেখে অর্জুন বললেন, জনার্দন, এই দুই বীরের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ? কৃষ্ণ বললেন, এঁরা দুজনেই সমান শিক্ষা পেয়েছেন, কিন্তু ভীমসেন অধিক বলশালী এবং দুর্যোধন দক্ষতায় ও যত্নে শ্রেষ্ঠ। ভীম ন্যায়যুদ্ধে জয়লাভ করবেন না, অন্যায়যুদ্ধেই দুর্যোধনকে বধ করতে পারবেন। দ্যূতসভায় ভীম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে যুদ্ধে গদাঘাতে দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ করবেন; এখন সেই প্রতিজ্ঞা পালন করুন, মায়াবী দুর্যোধনকে মায়া (কপটতা) দ্বারাই বিনষ্ট করুন। ভীম যদি কেবল নিজের বলের উপর নির্ভর ক’রে ন্যায়যুদ্ধ করেন তবে যুধিষ্ঠির বিপদে পড়বেন। ধর্মরাজের দোষে আবার আমরা সংকটে পড়েছি, বিজয়লাভ আসন্ন হয়েও সংশয়ের বিষয় হয়েছে। যুধিষ্ঠির নির্বোধের ন্যায় এই পণ করেছেন যে দুর্যোধন একজনকে বধ করতে পারলেই জয়ী হবেন। শুত্রুাচার্যের রচিত একটি পুরাতন শ্লোক আছে — পরাজিত হতাবশিষ্ট যোদ্ধা যদি ফিরে আসে তবে তাকে ভয় করতে হবে, কারণ সে মরণ পণ ক’রে যুদ্ধ করবে।

 অর্জুন তখন ভীমকে দেখিয়ে নিজের বাম ঊরুতে চপেটাঘাত করলেন। এই সময়ে ভীম ও দুর্যোধন দুজনেই পরিশ্রান্ত হয়েছিলেন। সহসা দুর্যোধনকে নিকটে পেয়ে ভীম মহাবেগে তাঁর গদা নিক্ষেপ করলেন, দুর্যোধন সত্বর সরে গিয়ে ভীমকে প্রহার করলেন। ভীম রুধিরাক্তদেহে কিছুক্ষণ মূর্ছিতের ন্যায় রইলেন, তার পর আবার দুর্যোধনের প্রতি ধাবিত হলেন। ভীমের প্রহার ব্যর্থ করবার ইচ্ছায় দুর্যোধন লাফিয়ে উঠলেন, সেই অবসরে ভীম সিংহের ন্যায় গর্জন ক’রে গদাঘাতে দুর্যোধনের দুই ঊরু ভগ্ন করলেন।

 দুর্যোধন সশব্দে ভূতলে নিপতিত হলেন। তখন ধূলিবৃষ্টি রক্তবৃষ্টি ও উল্কাপাত হ’ল, যক্ষ রাক্ষস ও পিশাচগণ অন্তরীক্ষে কোলাহল ক’রে উঠল, ঘোরদর্শন কবন্ধসকল নৃত্য করতে লাগল। ভূপতিত শত্রুকে ভর্ৎসনা করে ভীম বললেন, আমাদের শঠতা দ্যূতক্রীড়া বা বঞ্চনা নেই, আমরা আগুন লাগাই না, নিজের বাহুবলেই শত্রুবধ করি। তার পর ভীম তাঁর বাঁ পা দিয়ে দুর্যোধনের মাথা মাড়িয়ে তাঁকে শঠ ব’লে তিরস্কার করলেন।

 ক্ষুদ্রচেতা ভীমের আচরণে সোমকবীরগণ অসন্তুষ্ট হলেন। যুধিষ্ঠির বললেন, ভীম, তুমি সৎ বা অসৎ উপায়ে শত্রুতার প্রতিশোধ নিয়েছ, প্রতিজ্ঞাও পূর্ণ করেছ, এখন ক্ষান্ত হও। রাজ। দুর্যোধন এখন হতপ্রায়, ইনি একাদশ অক্ষৌহিণী