দুর্যোধন শাশ্বত স্বর্গ লাভ করবেন। ইনি রণযজ্ঞে নিজেকে আহতি দিয়ে যজ্ঞান্তস্নানের যশ লাভ করেছেন। এই কথা ব’লে বলরাম তাঁর রথে উঠে দ্বারকার অভিমুখে যাত্রা করলেন।
বলরাম চ’লে গেলে পাণ্ডব পাঞ্চাল ও যাদবগণ নিরানন্দ হয়ে রইলেন। যুধিষ্ঠির বিষণ্ণ হয়ে কৃষ্ণকে বললেন, বৃকোদর দুর্যোধনের মাথায় পা দিয়েছেন তাতে আমি প্রীত হই নি, কুলক্ষয়েও আমি হৃষ্ট হই নি। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা আমাদের উপর বহু অত্যাচার করেছে, সেই দারুণ দুঃখ ভীমের হৃদয়ে রয়েছে, এই চিন্তা ক’রে আমি ভীমের আচরণ উপেক্ষা করলাম। ভীমের কার্য ধর্ম সংগত বা ধর্মবিরুদ্ধ যাই হ’ক, তিনি অমার্জিতবুদ্ধি লোভী কামনার দাস দুর্যোধনকে বধ করে অভীষ্টলাভ করুন।
ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে বাসদেব সদুঃখে বললেন, তাই হ’ক। তিনি ভীমকে প্রীত করবার ইচ্ছায় তাঁর সকল কার্যের অনুমোদন করলেন। অসন্তুষ্ট অর্জুন ভীমকে ভাল মন্দ কিছুই বললেন না। ভীম হৃষ্টচিত্তে উৎফুল্লনেত্রে কৃতাঞ্জলি হয়ে যুধিষ্ঠিরকে অভিবাদন ক’রে বললেন, মহারাজ, আজ পৃথিবী মঙ্গলময় ও নিষ্কণ্টক হ’ল, আপনি রাজ্যশাসন ও স্বধর্ম পালন করুন। যুধিষ্ঠির বললেন, আমরা কৃষ্ণের মতে চ’লেই পৃথিবী জয় করেছি। দুর্ধর্য ভীম, ভাগ্যক্রমে তুমি মাতার নিকট এবং নিজের ক্রোধের নিকট ঋণমুক্ত হয়েছ, শত্রুনিপাত ক’রে জয়ী হয়েছ।
১৪। দুর্যোধনের ভর্ৎসনা
দুর্যোধনের পতনে পাণ্ডব পাঞ্চাল ও সৃঞ্জয় যোদ্ধারা হৃষ্ট হয়ে সিংহনাদ ক’রে উত্তরীয় নাড়তে লাগলেন। তাঁদের অনেকে ভীমকে বললেন, বীর, ভাগ্যবশে আপনি মত্ত হস্তীর ন্যায় পদ দ্বারা দুর্যোধনের মস্তক মর্দন করেছেন, সিংহ যেমন মহিষের রক্ত পান করে সেইরূপ আপনি দুঃশাসনের রক্ত পান করেছেন। এই দেখুন, দুর্যোধন পতিত হ’লে আমাদের যে রোমহর্ষ হয়েছিল তা এখনও যায় নি।
এইপ্রকার অশোভন উক্তি শুনে কৃষ্ণ বললেন, বিনষ্ট শত্রুকে উগ্রবাক্যে আঘাত করা উচিত নয়। এই নির্লজ্জ লোভী পাপী দুর্যোধন যখন সুহৃদ্গণের উপদেশ লঙ্ঘন করেছিল তখনই এর মৃত্যু হয়েছে। এই নরাধম এখন অক্ষম হয়ে কাষ্ঠের ন্যায় প’ড়ে আছে, একে বাক্য দ্বারা পীড়িত ক’রে কি হবে?