পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩২
মহাভারত

 দুর্যোধন দুই হাতে ভর দিয়ে উঠে বসলেন এবং প্রাণান্তকর যন্ত্রণা অগ্রাহ্য ক’রে ভ্রুকুটি ক’রে কৃষ্ণকে বললেন, কংসদাসের পুত্র, অন্যায় যুদ্ধে আমাকে নিপাতিত ক’রে তোমার লজ্জা হচ্ছে না? তুমিই ভীমকে ঊরুভঙ্গের প্রতিজ্ঞা মনে করিয়ে দিয়েছিলে, তুমি অর্জুনকে যা বলেছিলে তা কি আমি জানি না? তোমারই কূটনীতিতে আমাদের বহু সহস্র যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তুমিই শিখণ্ডীকে সম্মুখে রাখিয়ে অর্জুনের বাণে ভীষ্মকে নিপাতিত করেছ, অশ্বত্থামার মরণের মিথ্যা সংবাদ দিয়ে দ্রোণাচার্যকে বধ করিয়েছ, কর্ণ যখন ভূমি থেকে রথচক্র তুলছিলেন তখন তুমিই অর্জুনকে দিয়ে তাঁকে হত্যা করেছ। আমাদের সঙ্গে ন্যায়যুদ্ধ করলে তোমরা কখনও জয়ী হ’তে না।

 কৃষ্ণ উত্তর দিলেন, গান্ধারীর পুত্র, তুমি পাপের পথে গিয়েই আত্মীয়বান্ধব সহ হত হয়েছ। ভীষ্ম পাণ্ডবদের অনিষ্টকামনায় যুদ্ধ করছিলেন সেজন্যই শিখণ্ডী কর্তৃক নিহত হয়েছেন। দ্রোণ স্বধর্ম ত্যাগ ক’রে তোমার প্রীতির জন্য যুদ্ধ করছিলেন, তাই ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে বধ করেছেন। বহু ছিদ্র পেয়েও অর্জুন কর্ণকে মারেন নি, বীরোচিত উপায়েই তাঁকে মেরেছেন। অর্জুন নিন্দিত কার্য করেন না, তাঁর দয়াতেই তুমি এবং ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ অশ্বত্থামা প্রভৃতি বিরাটনগরে নিহত হও নি। তুমি আমাদের যেসব অকার্যের কথা বলেছ তা তোমার অপরাধের জন্যই আমরা করেছি। লোভের বশে এবং অতিরিক্ত শক্তিলাভের বাসনায় তুমি যেসব দুষ্কর্ম করেছ এখন তারই ফল ভোগ কর।

 দুর্যোধন বললেন, আমি যথাবিধি অধ্যয়ন দান ও সসাগরা পৃথিবী শাসন করেছি, শত্রুদের মস্তকে অধিষ্ঠান করেছি, ক্ষত্রিয়ের অভীষ্ট মরণ লাভ করেছি, দেবগণের যোগ্য এবং নপগণের দুর্লভ রাজ্য ভোগ করেছি, শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্য লাভ করেছি; আমার তুল্য আর কে আছে? কৃষ্ণ, সুহৃৎ ও ভ্রাতাদের সঙ্গে আমি স্বর্গে যাব। তোমাদের সংকল্প পূর্ণ হ’ল না, তোমরা শোকসন্তপ্ত হয়ে জীবনধারণ কর।

 দুর্যোধনের উপর আকাশ থেকে পুষ্পবৃষ্টি হ’ল, অপ্সরা ও গন্ধর্বগণ গীতবাদ্য করতে লাগল, সিদ্ধগণ সাধু সাধু বললেন। দুর্যোধনের এইপ্রকার সম্মান দেখে কৃষ্ণ ও পাণ্ডব প্রভৃতি লজ্জিত হলেন। বিষণ্ণ পাণ্ডবগণকে কৃষ্ণ বললেন, দুর্যোধন ও ভীষ্মাদি বীরগণকে আপনারা ন্যায়যুদ্ধে বধ করতে পারতেন না। আপনাদের হিতসাধনের জন্যই আমি কূট উপায়ে এঁদের নিধন ঘটিয়েছি। শত্রু বহু বা প্রবল হ’লে বিবিধ কূট উপায়ে তাদের বধ করতে হয়, দেবতারা এবং অনেক সৎপুরুষ এইরূপ করেছেন। আমরা কৃতকার্য হয়েছি, এখন সায়াহ্ণকালে বিশ্রাম