পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদিপর্ব
২৯

আদুন্বস্ব বিদুন্বস্ব দ্রুহ্য কুপ্যস্ব যাচকি।
অনায়ুধা সায়ুধায়া রিক্তা ক্ষুভ্যসি ভিক্ষুকি।
লপ্স্যসে প্রতিযোদ্ধারং ন হি ত্বাং গণয়াম্যহম,॥[১]

—যাচকী, যতই বিলাপ কর, গড়াগড়ি দে, বিবাদ কর বা রাগ দেখা, তোর অস্ত্র নেই আমার অস্ত্র আছে। ভিক্ষুকী, তুই নিঃস্ব হয়ে ক্ষোভ করছিস। আমি তোকে গ্রাহ্য করি না, ঝগড়া করবার জন্য তুই নিজের সমান লোক পাবি।

 দেবযানী নিজের বস্ত্র নেবার জন্য টানতে লাগলেন, তখন শর্মিষ্ঠা ক্রোধে অধীর হয়ে তাঁকে এক কূপের মধ্যে ঠেলে ফেলে দিলেন এবং ম’রে গেছে মনে ক’রে নিজের ভবনে চলে গেলেন। সেই সময়ে মৃগয়ায় শ্রান্ত ও পিপাসিত হয়ে রাজা যযাতি অশ্বারোহণে সেই কূপের কাছে এলেন। তিনি দেখলেন, কূপের মধ্যে অগ্নিশিখার ন্যায় এক কন্যা রয়েছে। রাজা তাঁকে আশ্বস্ত করলে দেবযানী নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আপনাকে সৎকুলোদ্‌ভব শান্ত বীর্যবান দেখছি, আমার দক্ষিণ হস্ত ধ’রে আপনি আমাকে তুলুন। যযাতি দেবযানীকে উদ্ধার ক’রে রাজধানীতে চ’লে গেলেন।

 দেবযানীর দাসীর মুখে সংবাদ পেয়ে শুক্র তখনই সেখানে এলেন। তিনি কন্যাকে আলিঙ্গন ক’রে বললেন, বোধ হয় তোমার কোনও পাপ ছিল তারই এই প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে। দেবযানী বললেন, প্রায়শ্চিত্ত হ’ক বা না হ’ক, শর্মিষ্ঠা ক্রোধে রক্তচক্ষু হয়ে আমাকে কি বলেছে শুনুন।—তুই স্তুতিকারী যাচকের কন্যা, আর আমি দাতার কন্যা—তোর পিতা যাঁর স্তুতি করেন। পিতা, শর্মিষ্ঠার কথা যদি সত্য হয় তবে তার কাছে নতি স্বীকার করব এই কথা তার সখীকে আমি বলেছি। শুক্র বললেন, তুমি স্তাবক আর যাচকের কন্যা নও, তুমি যাঁর কন্যা তাঁকেই সকলে স্তব করে, বৃষপর্বা ইন্দ্র আর রাজা যযাতি তা জানেন। যিনি সজ্জন তাঁর পক্ষে নিজের গুণবর্ণনা কষ্টকর, সেজন্য আমি কিছু বলতে চাই না। কন্যা, ওঠ, আমরা ক্ষমা ক’রে নিজের গৃহে যাই, সাধুজনের ক্ষমাই শ্রেষ্ঠ গুণ। ক্ষমার দ্বারা ক্রোধকে যে নিরস্ত করতে পারে সে সর্ব জগৎ জয় করে। দেবযানী বললেন, পিতা, আমি ও সব কথা জানি, কিন্তু পণ্ডিতরা বলেন নীচ লোকের কাছে অপমানিত হওয়ার চেয়ে মরণ ভাল। অস্ত্রাঘাতে যে ক্ষত হয় তা সারে কিন্তু বাক্‌ক্ষত সারে না।

 তখন শুক্র ক্রুদ্ধ হয়ে দানবরাজ বৃষপর্বার কাছে গিয়ে বললেন, রাজা,

  1. বহু আর্য প্রয়োগ আছে।