পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শল্যপর্ব
৫৩৩

করতে ইচ্ছা করি, আপনারাও সকলে বিশ্রাম করুন। তখন পাঞ্চালগণ হৃষ্ট হয়ে শঙ্খধ্বনি করলেন, কৃষ্ণও পাঞ্চজন্য বাজালেন।

১৫। ধৃতরাষ্ট্র-গান্ধারী-সকাশে কৃষ্ণ

 সকলে নিজ নিজ আবাসে প্রস্থান করলে পাণ্ডবগণ দুর্যোধনের শিবিরে গেলেন। স্ত্রীলোক, নপুংসক ও বৃদ্ধ অমাত্যগণ সেখানে ছিলেন। দুর্যোধনের পরিচরগণ কৃতাঞ্জলি হয়ে তাঁদের সম্মুখে এল। পাণ্ডবগণ রথ থেকে নামলে কৃষ্ণের উপদেশে অর্জুন তাঁর গাণ্ডীব ও দুই অক্ষয় তূণ নামিয়ে নিলেন, তার পর কৃষ্ণ নামলেন। তখনই রথের ধ্বজাস্থিত দিব্যবানর অন্তর্হিত হ’ল, রথ ও অস্ত্রসকলও ভস্ম হয়ে গেল। বিস্মিত অর্জুনকে কৃষ্ণ বললেন, বহুবিধ অস্ত্রের প্রভাবে তোমার রথে পূর্বেই অগ্নিসংযোগ হয়েছিল, আমি উপরে থাকায় এত কাল দগ্ধ হয় নি। এখন তুমি কৃতকার্য হয়েছ, আমি নেমেছি, সেজন্য রথ ভস্ম হয়ে গেল।

 পাণ্ডবপক্ষের যোদ্ধারা দুর্যোধনের শিবিরে অসংখ্য ধনরত্ন ও দাসদাসী পেয়ে কোলাহল করতে লাগলেন। কৃষ্ণের উপদেশে পঞ্চপাণ্ডব ও সাত্যকি শিবিরের বহির্দেশে নদীতীরে রাত্রিযাপনের আয়োজন করলেন। যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে বললেন, জনার্দন, ধৃতরাষ্ট্রমহিষী তপস্বিনী গান্ধারী পুত্রপৌত্রগণের নিধন শুনে নিশ্চয় আমাদের ভস্মসাৎ করবেন। তোমার অনুগ্রহেই আমাদের রাজ্য নিষ্কণ্টক হয়েছে, তুমি আমাদের জন্য বার বার অস্ত্রাঘাত ও কঠোর বাকাযন্ত্রণা সয়েছ, এখন পত্রশোকার্তা গান্ধারীর ক্রোধ শান্ত ক’রে আমাদের রক্ষা কর।

 দারুকের রথে চ’ড়ে কৃষ্ণ তখনই হস্তিনাপুরে গেলেন। সেখানে ব্যাসদেবকে দেখে তাঁর চরণবন্দনা ক’রে কৃষ্ণ ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীকে অভিবাদন করলেন। ধৃতরাষ্ট্রের হাত ধ’রে কৃষ্ণ সরোদনে বললেন, মহারাজ, কুলক্ষয় ও যুদ্ধ নিবারণের জন্য পাণ্ডবরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কৃতকার্য হন নি। তাঁরা বহু কষ্ট ভোগ করেছেন। যুদ্ধের পূর্বে আমি আপনার কাছে এসে পাণ্ডবদের জন্য পাঁচটি গ্রাম চেয়েছিলাম, কিন্তু লোভের বশে তাতেও আপনি সম্মত হন নি। ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ বিদুর প্রভৃতি সন্ধির জন্য বার বার আপনাকে অনুরোধ করেছিলেন, তাতেও ফল হয় নি। আপনি পাণ্ডবদের দোষী মনে করবেন না, এই কুলক্ষয় আপনার দোষেই ঘটেছে। এখন আপনার কুলরক্ষা পিণ্ডদান এবং পুত্রের করণীয় যা কিছু আছে তার ভার পাণ্ডবদের উপরেই পড়েছে। অতএব আপনি এবং গান্ধারী ক্রোধ ও শোক ত্যাগ