পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩৪
মহাভারত

ক’রে তাঁদের প্রতিপালন করুন। আপনার প্রতি যুধিষ্ঠিরের যে প্রীতি ও ভক্তি আছে তা আপনি জানেন। এখন তিনি শোকানলে দিবারাত্র দগ্ধ হচ্ছেন। আপনি পুত্রশোকে কাতর হয়ে আছেন সেজন্য তিনি লজ্জায় আপনার কাছে আসতে পারছেন না।

 তার পর বাসুদেব গান্ধারীকে বললেন, সুবলনন্দিনী, আপনার তুল্য নারী পৃথিবীতে দেখা যায় না। দুই পক্ষের হিতের জন্য আপনি যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা আপনার পুত্রেরা পালন করেন নি। আপনি দুর্যোধনকে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, মূঢ়, যেখানে ধর্ম সেখানেই জয়। কল্যাণী, আপনার সেই বাক্য এখন সকল হয়েছে, অতএব শোক করবেন না, পাণ্ডবদের বিনাশকামনাও করবেন না। আপনি তপস্যার প্রভাবে ক্রোধদীপ্ত নয়ন দ্বারা চরাচর সহ সমস্ত পৃথিবী দগ্ধ করতে পারেন।

 গান্ধারী বললেন, কেশব, তুমি যা বললে তা সত্য। দুঃখে আমার মন অস্থির হয়েছিল, তোমার কথায় শান্ত হ’ল। এখন তুমি আর পাণ্ডবরাই এই পুত্রহীন বৃদ্ধ অন্ধ রাজার অবলম্বন। এই ব’লে গান্ধারী বস্ত্রে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলেন। ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারীকে সান্ত্বনা দিতে দিতে কৃষ্ণের জ্ঞান হ’ল যে অশ্বত্থামা এক দুষ্ট সংকল্প করেছেন। তিনি তখনই গাত্রোত্থান করলেন এবং ব্যাসদেবকে প্রণাম ক’রে ধৃতরাষ্ট্রকে বললেন, মহারাজ, আর শোক করবেন না। আমার এখন স্মরণ হ’ল যে অশ্বত্থামা পাণ্ডবদের বিনাশের সংকল্প করেছেন, সেকারণে আমি এখন যাচ্ছি। ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী বললেন, কৃষ্ণ, তুমি শীঘ্র গিয়ে পাণ্ডবদের রক্ষার ব্যবস্থা কর; আবার যেন তোমার সঙ্গে আমাদের দেখা হয়।

১৬। অশ্বত্থামার অভিষেক

 কৃপাচার্য অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মা দূতমুখে দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গের সংবাদ শুনে রথে চ’ড়ে সত্বর তাঁর কাছে এলেন। অশ্বত্থামা শোকার্ত হয়ে বললেন, হা মহারাজ, সসাগরা পৃথিবীর অধীশ্বর হয়ে এই নির্জন বনে একাকী প’ড়ে আছ কেন? দুর্যোধন সাশ্রুনয়নে বললেন, বীরগণ, কালধর্মে সমস্তই বিনষ্ট হয়। আমি কখনও যুদ্ধে বিমুখ হই নি, পাপী পাণ্ডবগণ কপট উপায়ে আমাকে নিপাতিত করেছে। ভাগ্যক্রমে আপনারা তিন জন জীবিত আছেন, আপনারা আমার জন্য দুঃখ করবেন না। যদি বেদবাক্য সত্য হয় তবে আমি নিশ্চয় স্বর্গলোকে যাব। আপনারা জয়লাভের জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দৈবকে অতিক্রম করা অসাধ্য।