পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সৌপ্তিকপর্ব

॥ সৌপ্তিকপর্বাধ্যায়॥

১। অশ্বত্থামার সংকল্প

 কৃপাচার্য অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মা কিছু দূর গিয়ে এক ঘোর বনে উপস্থিত হলেন। অল্প কাল বিশ্রাম ক’রে এবং অশ্বদের জল খাইয়ে তাঁরা পুনর্বার যাত্রা করলেন এবং একটি বিশাল বটবৃক্ষের নিকটে এসে রথ থেকে নেমে সন্ধ্যাবন্দনা করলেন। ক্রমে রাত্রি গভীর হ’ল, কৃপ ও কৃতবর্মা ভূতলে শুয়ে নিদ্রিত হলেন। অশ্বত্থামার নিদ্রা হ’ল না, তিনি ক্রোধে অধীর হয়ে সর্পের ন্যায় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। তিনি দেখলেন, সেই বটবৃক্ষে বহু সহস্র কাক নিঃশঙ্ক হয়ে নিদ্রা যাচ্ছে, এমন সময় এক ঘোরদর্শন কৃষ্ণপিঙ্গলবর্ণ বৃহৎ পেচক এসে বিস্তর কাক বিনষ্ট করলে, তাদের ছিন্ন দেহে ও অবয়বে বৃক্ষের তলদেশ আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

 অশ্বত্থামা ভাবলেন, এই পেচক যথাকালে আমাকে শত্রু সংহারের উপযুক্ত উপদেশ দিয়েছে। আমি বলবান বিজয়ী পাণ্ডবদের সম্মুখযুদ্ধে বধ করতে পারব না। যে কার্য গর্হিত ব’লে গণ্য হয়, ক্ষত্রধর্মাবলম্বী মানুষের পক্ষে তাও করণীয়। এইপ্রকার শ্লোক শোনা যায় — পরিশ্রান্ত, ভগ্ন, ভোজনে রত, পলায়মান, আশ্রয়প্রবিষ্ট, অর্ধরাত্রে নিদ্রিত, নায়কহীন, বিচ্ছিন্ন বা দ্বিধাযুক্ত শত্রুকে প্রহার করা বিধেয়। অশ্বত্থামা স্থির করলেন, তিনি সেই রাত্রিতেই পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণকে সুপ্ত অবস্থায় হত্যা করবেন।

 দুই সঙ্গীকে জাগরিত করিয়ে অশ্বত্থামা তাঁর সংকল্প জানালেন। কৃপ ও কৃতবর্মা লজ্জিত হয়ে উত্তর দিতে পারলেন না। ক্ষণকাল পরে কৃপ বললেন, কেবল দৈব বা কেবল পুরুষকারে কার্য সিদ্ধ হয় না, দুইএর যোগেই সিদ্ধিলাভ হয়। কর্মদক্ষ লোক যদি চেষ্টা ক’রেও কৃতকার্য না হয় তবে তার নিন্দা হয় না; কিন্তু অলস লোকে যদি কর্ম না ক’রেও ফললাভ করে তবে সে নিন্দা ও বিদ্বেষের পাত্র হয়। লোভী অদূরদর্শী দুর্যোধন হিতৈষী মিত্রদের উপদেশ শোনেন নি, তিনি অসাধু লোকদের মন্ত্রণায় পাণ্ডবগণের সঙ্গে শত্রুতা করেছেন। আমরা সেই দুঃশীল পাপীর