পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৩৮
মহাভারত

অত্যল্প পাপকর্মও তুমি কর নি; অতএব তুমি কাল প্রভাতে শত্রুগণকে যুদ্ধে জয় ক’রো। শুক্ল বস্তুতে যেমন রক্তবর্ণ, সেইরূপ তোমার পক্ষে গর্হিত কর্ম অসম্ভাবিত মনে করি।

 অশ্বত্থামা বললেন, মাতুল, আপনার কথা সত্য, কিন্তু পাণ্ডবরা পূর্বেই ধর্মের সেতু শত খণ্ডে ভগ্ন করেছে। আমি আজ রাত্রিতেই পিতৃহন্তা পাঞ্চালগণকে সুপ্ত অবস্থায় বধ করব, তার ফলে যদি আমাকে কীটপতঙ্গ হয়ে জন্মাতে হয় তাও শ্রেয়। আমার পিতা যখন অস্ত্র ত্যাগ করেছিলেন তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁকে বধ করেছিল; আমিও সেইরূপ পাপকর্ম করব, বর্মহীন ধৃষ্টদ্যুম্নকে পশুর ন্যায় বধ করব, যাতে সেই পাপী অস্ত্রাঘাতে নিহত বীরের স্বর্গ না পায়। অশ্বত্থামা এই ব’লে বিপক্ষশিবিরের অভিমুখে যাত্রা করলেন, কৃপ ও কৃতবর্মাও নিজ নিজ রথে চ’ড়ে অনুগমন করলেন।

২। মহাদেবের আবির্ভাব

 শিবিরের দ্বারদেশে এসে অশ্বত্থামা দেখলেন, সেখানে এক মহাকায় চন্দ্রসূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান লোমহর্ষকর পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁর পরিধান রুধিরাক্ত ব্যাঘ্রচর্ম, উত্তরীয় কৃষ্ণসারমৃগচর্ম, গলদেশে সর্পের উপবীত, হস্তে নানাবিধ অস্ত্র উদ্যত হয়ে আছে। তাঁর দংষ্ট্রাকরাল মুখ, নাসিকা, কর্ণ ও সহস্র নেত্র থেকে অগ্নিশিখা নির্গত হচ্ছে, তার কিরণে শত সহস্র শঙ্খচক্রগদাধর বিষ্ণু আবির্ভূত হচ্ছেন।

 অশ্বত্থামা নিঃশঙ্ক হয়ে সেই ভয়ংকর পুরুষের প্রতি বিবিধ দিব্যাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, কিন্তু সেই পুরুষ সমস্ত অস্ত্রই গ্রাস করে ফেললেন। অস্ত্র নিঃশেষ হ’লে অশ্বত্থামা দেখলেন, অসংখ্য বিষ্ণুর আবির্ভাবে আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। তখন নিরস্ত্র অশ্বত্থামা কৃপাচার্যের বাক্য স্মরণ ক’রে অনুতপ্ত হলেন এবং রথ থেকে নেমে প্রণত হয়ে শূলপাণি মহাদেবের উদ্দেশে স্তব ক’রে বললেন, হে দেব, যদি আজ এই ঘোর বিপদ থেকে উত্তীর্ণ হ’তে পারি তবে আপনাকে আমার এই পঞ্চভূতময় শরীর উপহার দেব।

 তখন একটি কাঞ্চনময় বেদী আবির্ভূত হ’ল এবং তাতে অগ্নি জ্বলে উঠল। নানারূপধারী বিকটাকার প্রমথগণ উপস্থিত হ’ল। তাদের কেউ ভেরী শঙ্খ মৃদঙ্গ প্রভৃতি বাজাতে লাগল, কেউ নৃত্যগীতে রত হ’ল, কেউ লাফাতে