পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪০
মহাভারত

পাণ্ডবদের শিবিরে গেলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নের নারীদের ক্রন্দন শুনে বহু যোদ্ধা সত্বর এসে অশ্বত্থামাকে বেষ্টন করলেন, কিন্তু সকলেই রুদ্রাস্ত্রে নিহত হলেন। তার পর অশ্বত্থামা উত্তমৌজা ও যুধামন্যুকে বধ ক’রে শিবিরস্থ নিদ্রামগ্ন শ্রান্ত ও নিরস্ত্র সকল যোদ্ধাকেই হত্যা করলেন। দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র কোলাহল শুনে জাগরিত হলেন এবং শিখণ্ডীর সঙ্গে এসে অশ্বত্থামার প্রতি বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। অশ্বত্থামা খড়্‌গের আঘাতে দ্রৌপদীর পুত্রগণকে একে একে বধ করলেন, শিখণ্ডীকেও দ্বিখণ্ডিত করলেন।

 শিবিরের রক্ষিগণ দেখলে, রক্তবদনা রক্তবসনা রক্তমাল্যধারিণী পাশহস্তা কালরাত্রিরূপা কালী তাঁর সহচরীদের সঙ্গে অবির্ভূত হয়েছেন, তিনি গান করছেন এবং মানুষ হস্তী ও অশ্বসকলকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন। এই রক্ষীরা পূর্বে প্রতি রাত্রিতে কালীকে এবং হত্যায় রত অশ্বত্থামাকে স্বপ্নে দেখত; এখন তারা স্বপ্ন স্মরণ ক’রে বলতে লাগল, এই সেই!

 অর্ধরাত্রের মধ্যেই অশ্বত্থামা পাণ্ডবশিরিরস্থ সমস্ত সৈন্য হস্তী ও অশ্ব বধ করলেন। যারা পালাচ্ছিল তারাও দ্বারদেশে কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা কর্তৃক নিহত হ’ল। এই হত্যাকাণ্ড শেষ হ’লে অশ্বত্থামা বললেন, আমরা কৃতকার্য হয়েছি, এখন শীঘ্র রাজা দুর্যোধনের কাছে চলুন, তিনি যদি জীবিত থাকেন তবে তাঁকে প্রিয়সংবাদ দেব।

৪। দুর্যোধনের মৃত্যু

 অশ্বত্থামা প্রভৃতি দুর্যোধনের কাছে এসে দেখলেন, তখনও তিনি জীবিত আছেন, অচেতন হয়ে রুধির বমন করছেন, এবং অতি কষ্টে মাংশাসী শ্বাপদগণকে তাড়াচ্ছেন। অশ্বত্থামা করুণ বিলাপ ক’রে বললেন, পুরুষশ্রেষ্ঠ দুর্যোধন, তোমার জন্য শোক করি না, তোমার পিতামাতার জন্যই শোক করছি, তাঁরা এখন ভিক্ষুকের ন্যায় বিচরণ করবেন। গান্ধারীপুত্র, তুমি ধন্য, শত্রুর সম্মুখীন হয়ে ধর্মানুসারে যুদ্ধ ক’রে তুমি নিহত হয়েছ। কৃপাচার্য কৃতবর্মা আর আমাকে ধিক, আমরা তোমাকে অগ্রবর্তী ক’রে স্বর্গে যেতে পারছি না। মহারাজ, তেমার প্রসাদে আমার পিতার ও কৃপের গৃহে প্রচুর ধনরত্ন আছে, আমরা বহু যজ্ঞ করেছি, প্রচুর দক্ষিণাও দিয়েছি। তুমি চ’লে যাচ্ছ, পাপী আমরা কিপ্রকারে জীবনধারণ করব? তুমি স্বর্গে গিয়ে দ্রোণাচার্যকে জানিও যে আজ আমি ধৃষ্টদ্যুম্নকে বধ করেছি। তুমি