পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সৌপ্তিকপর্ব
৫৪১

আমাদের হয়ে বাহ্ণীকরাজ, জয়দ্রথ, সোমদত্ত, ভূরিশ্রবা, ভগদত্ত প্রভৃতিকে আলিঙ্গন ক’রে কুশলজিজ্ঞাসা ক’রো। দুর্যোধন, সুখসংবাদ শোন—শত্রু পক্ষে কেবল পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ ও সাত্যকি এই সাত জন অবশিষ্ট আছেন; আমাদের পক্ষে কৃপাচার্য, কৃতবর্মা আর আমি আছি। দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র, ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্রগণ, এবং সমস্ত পাঞ্চাল ও মৎস্যদেশীয় যোদ্ধা নিহত হয়েছে, হস্তী অশ্ব প্রভৃতির সহিত পাণ্ডবশিবিরও ধ্বংস হয়েছে।

 প্রিয়সংবাদ শুনে দুর্যোধন চৈতন্যলাভ ক’রে বললেন, আচার্য পুত্র, তুমি কৃপাচার্য ও কৃতবর্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে যা করেছ, ভীষ্ম-দ্রোণ-কর্ণও তা পারেন নি। আজ আমি নিজেকে ইন্দ্রের সমান মনে করছি। তোমাদের মঙ্গল হ’ক, স্বর্গে আমাদের মিলন হবে। এই ব’লে কুরুরাজ দুর্যোধন প্রাণত্যাগ ক’রে পুণ্যময় স্বর্গলোকে প্রস্থান করলেন, তাঁর দেহ ভূতলে প’ড়ে রইল।


॥ ঐষীকপর্বাধ্যায় ॥

৫। দ্রৌপদীর প্রায়োপবেশন

 রাত্রি গত হ’লে ধৃষ্টদ্যুম্নের সারথি যুধিষ্ঠিরের কাছে গিয়ে অশ্বত্থামার নৃশংস কর্মের বৃত্তান্ত জানালে। পুত্রশোকে আকুল হয়ে যুধিষ্ঠির ভূপতিত হলেন, তাঁর ভ্রাতারা এবং সাত্যকি তাঁকে ধ’রে ওঠালেন। যুধিষ্ঠির বিলাপ করে বললেন, লোকে পরাজিত হ’তে হ’তেও জয়লাভ করে, কিন্তু আমরা জয়ী হয়েও পরাজিত হয়েছি। যে রাজপুত্রেরা ভীষ্ম দ্রোণ ও কর্ণের হাতে মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁরা আজ অসাবধানতার জন্য নিহত হলেন! ধনী বণিকেরা যেমন সমুদ্র উত্তীর্ণ হয়ে সতর্কতার অভাবে ক্ষুদ্র নদীতে নিমগ্ন হয়, ইন্দ্রতুল্য রাজপুত্র ও পৌত্রগণ সেইরূপ অশ্বত্থামার হাতে নিহত হলেন। এঁরা স্বর্গে গেছেন, দ্রৌপদীর জন্যই শোক করছি, সেই সাধ্বী কি ক’রে এই মহাদুঃখ সইবেন? নকুল, তুমি মন্দভাগ্যা দ্রৌপদীকে মাতৃগণের সহিত এখানে নিয়ে এস। তার পর যুধিষ্ঠির সুহৃদ্‌গণের সঙ্গে শিবিরে গিয়ে দেখলেন, তাঁদের পুত্র পৌত্র ও সখারা ছিন্নদেহে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন। তিনি শোকে আকুল হয়ে অচেতনপ্রায় হলেন, সুহৃদ্‌গণ তাঁকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।