পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪২
মহাভারত

 নকুল উপপ্লব্য নগর থেকে দ্রৌপদীকে নিয়ে এলেন। দ্রৌপদী বাতাহত কদলীতরুর ন্যায় কাঁপতে কাঁপতে ভূমিতে প’ড়ে গেলেন, ভীমসেন তাঁকে ধ’রে উঠিয়ে সান্ত্বনা দিলেন। দ্রৌপদী সরোদনে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, রাজা, তুমি ক্ষত্রধর্ম অনুসারে পুত্রদের যমকে দান করেছ, এখন রাজ্য ভোগ কর। ভাগ্যক্রমে তুমি সমগ্র পৃথিবী লাভ করেছ, এখন আর মত্তমাতঙ্গগামী বীর অভিমন্যুকে তোমার স্মরণ হবে না। আজ যদি তুমি পাপী দ্রোণপুত্রকে যুদ্ধে বধ না কর তবে আমি এখানেই প্রায়োপবেশনে প্রাণত্যাগ করব। পাণ্ডবগণ, তোমরা আমার এই প্রতিজ্ঞা জেনে রাখ। এই ব’লে দ্রৌপদী প্রায়োপবেশন আরম্ভ করলেন।

 যুধিষ্ঠির বললেন, কল্যাণী, তোমার পুত্র ও ভ্রাতারা ক্ষত্রধর্মানুসারে নিহত হয়েছেন, তাঁদের জন্য শোক ক’রো না। দ্রোণপুত্র দুর্গম বনে চ’লে গেছেন, যুদ্ধে তাঁর নিপাত তুমি কি ক’রে দেখতে পাবে? দ্রৌপদী বললেন, রাজা, শুনেছি অশ্বত্থামার মস্তকে একটি সহজাত মণি আছে। তুমি সেই পাপীকে বধ ক’রে তার মণি মস্তকে ধারণ ক’রে নিয়ে এস, তবেই আমি জীবনত্যাগে বিরত হব। তার পর দ্রৌপদী ভীমসেনকে বললেন, তুমি ক্ষত্রিয়ধর্ম স্মরণ ক’রে আমাকে ত্রাণ কর। তুমি জতুগৃহ থেকে ভ্রাতাদের উদ্ধার করেছিলে, হিড়িম্ব রাক্ষসকে বধ করেছিলে, কীচকের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিলে, এখন দ্রোণপুত্রকে বধ ক’রে সুখী হও।

 মহাবল ভীমসেন তখনই ধনুর্বাণ নিয়ে রথারোহণে যাত্রা করলেন, নকুল তাঁর সারথি হলেন।

৬। ব্রহ্মশির অস্ত্র

 ভীম চ’লে গেলে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, ভরতশ্রেষ্ঠ, ভীমসেন আপনার সর্বাপেক্ষা প্রিয় ভ্রাতা, ইনি বিপদের অভিমুখে যাচ্ছেন, আপনি ওঁর সঙ্গে গেলেন না কেন? দ্রোণাচার্য তাঁর পুত্রকে যে ব্রহ্মশির অস্ত্র দান করেছেন তা পৃথিবী দগ্ধ করতে পারে। অর্জুনকেও দ্রোণ এই অস্ত্র[১] শিখিয়েছেন। তিনি পুত্রের চপল স্বভাব জানতেন সেজন্য অস্ত্রদানকালে বলেছিলেন, বৎস, তুমি যুদ্ধে অত্যন্ত বিপন্ন হ’লেও এই অস্ত্র প্রয়োগ ক’রো না, বিশেষত মানুষের উপর। তার পর তিনি বলেছিলেন, তুমি কখনও সৎপথে থাকবে না। আপনারা বনবাসে চ’লে গেলে অশ্বত্থামা

  1. বনপর্ব ১০-পরিচ্ছেদে আছে, অর্জুন মহাদেবের কাছে এই অস্ত্র পেয়েছিলেন।