পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
মহাভারত

পাপের ফল সদ্য দেখা যায় না, কিন্তু যে বার বার পাপ করে সে সমূলে বিনষ্ট হয়। আমার নিষ্পাপ ধর্মজ্ঞ শিষ্য কচকে তুমি বধ করিয়েছিলে, তোমার কন্যা আমার কন্যাকে বহু কটু কথা ব’লে কূপে ফেলে দিয়েছে। তোমার রাজ্যে আমরা আর বাস করব না। বৃষপর্বা বললেন, যদি আমার প্ররোচনায় কচ নিহত হয়ে থাকে বা দেবযানীকে শর্মিষ্ঠা কটু কথা ব’লে থাকে, তবে আমার যেন অসদ্‌গতি হয়। আপনি প্রসন্ন হ’ন, যদি চলে যান তবে আমরা সমুদ্রে প্রবেশ করব। শুক্র বললেন, দেবযানী আমার অত্যন্ত প্রিয়, তার দুঃখ আমি সইতে পারি না। তোমরা তাকে প্রসন্ন কর।

 বৃষপর্বা সবান্ধবে দেবযানীর কাছে গিয়ে তাঁর পায়ে প’ড়ে বললেন, দেবযানী প্রসন্ন হও, তুমি যা চাইবে তাই দেব। দেবযানী বললেন, সহস্র কন্যার সহিত শর্মিষ্ঠা আমার দাসী হ’ক, পিতা আমার বিবাহ দিলে তারা আমার সঙ্গে যাবে। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের রোষ নিবারণের জন্য শর্মিষ্ঠা দাসীত্ব স্বীকার করলেন।


 দীর্ঘকাল পরে একদিন বরবর্ণিনী দেবযানী শর্মিষ্ঠা ও সহস্র দাসীর সঙ্গে বনে বিচরণ করছিলেন এমন সময় রাজা যযাতি মৃগের অন্বেষণে পিপাসিত ও শ্রান্ত হয়ে আবার সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন, রত্নভূষিত দিব্য আসনে সুহাসিনী দেবযানী ব’সে আছেন, রূপে অতুলনীয়া স্বর্ণালংকারভূষিতা আর একটি কন্যা কিঞ্চিৎ নিম্ন আসনে ব’সে দেবযানীর পদসেবা করছেন। যযাতির প্রশ্নের উত্তরে দেবযানী নিজেদের পরিচয় দিলেন। যযাতি বললেন, অসুররাজকন্যা কি ক’রে আপনার দাসী হলেন জানতে আমার কৌতূহল হচ্ছে, এমন সর্বাঙ্গসন্দরী আমি পূর্বে কখনও দেখি নি। আপনার রূপ এঁর রূপের তুল্য নয়। দেবযানী উত্তর দিলেন, সবই দৈবের বিধানে ঘটে, এঁর দাসীত্বও সেই কারণে হয়েছে। আকার বেশ ও কথাবার্তায় আপনাকে রাজা বোধ হচ্ছে, আপনি কে? যযাতি বললেন, আমি রাজা যযাতি, মৃগয়া করতে এসেছিলাম, এখন অনুমতি দিন ফিরে যাব।

 দেবযানী বললেন, শর্মিষ্ঠা আর এই সমস্ত দাসীর সঙ্গে আমি আপনার অধীন হচ্ছি, আপনি আমার ভর্তা ও সখা হ’ন। যযাতি বললেন, সুন্দরী, আমি আপনার যোগ্য নই, আপনার পিতা ক্ষত্রিয় রাজাকে কন্যাদান করবেন না। দেবযানী বললেন, ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয় পরস্পরের সংসৃষ্ট, আপনি পূর্বেই আমার পাণিগ্রহণ করেছেন, আমিও আপনাকে বরণ করেছি। দেবযানী তখন তাঁর পিতাকে ডাকিয়ে এনে বললেন, পিতা, এই রাজা যযাতি আমার পাণি গ্রহণ ক’রে কূপ থেকে উদ্ধার