পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সৌপ্তিকপর্ব
৫৪৩

দ্বারকায় এসে আমাকে বলেন, কৃষ্ণ, আমার ব্রহ্মশির অস্ত্র নিয়ে তোমার সুদর্শন চক্র আমাকে দাও। আমি উত্তর দিলাম, তোমার অস্ত্র আমি চাই না, তুমি আমার এই চক্র ধনু শক্তি বা গদা যা ইচ্ছা হয় নিতে পার। অশ্বত্থামা সুদর্শন চক্র নিতে গেলেন, কিন্তু দু হাতে ধ’রেও তুলতে পারলেন না। তখন আমি তাঁকে বললাম, মূঢ় ব্রাহণ, তুমি যা চেয়েছ তা অর্জুন প্রদ্যুম্ন বলরাম প্রভৃতিও কখনও চান নি। তুমি কেন আমার চক্র চাও? অশ্বত্থামা বললেন, কৃষ্ণ, এই চক্র পেলে সসম্মানে তোমার সঙ্গেই যুদ্ধ করতাম এবং সকলের অজেয় হতাম। কিন্তু দেখছি তুমি ভিন্ন আর কেউ এই চক্র ধারণ করতে পারে না। এই ব’লে অশ্বত্থামা চ’লে গেলেন। তিনি ক্রোধী দুরাত্মা চপল ও ক্রূর, তাঁর ব্রহ্মশির অস্ত্রও আছে; অতএব তাঁর হাত থেকে ভীমকে রক্ষা করতে হবে।

 তার পর কৃষ্ণ তাঁর গরুড়ধ্বজ রথে যুধিষ্ঠির ও অর্জুনকে তুলে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং ক্ষণকালমধ্যে ভীমকে দেখতে পেয়ে তাঁর পশ্চাতে গিয়ে গঙ্গাতীরে উপস্থিত হলেন। সেখানে তাঁরা দেখলেন, ক্রূরকর্মা অশ্বত্থামা কুশের কৌপীন প’রে ঘৃতাক্তদেহে ধূলি মেখে ব্যাস ও অন্যান্য ঋষিগণের মধ্যে ব’সে আছেন। ভীম ধুনর্বাণ নিয়ে অশ্বত্থামার প্রতি ধাবিত হলেন। কৃষ্ণার্জুন ও যুধিষ্ঠিরকে দেখে অশ্বত্থামা ভয় পেলেন; তিনি ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগের ইচ্ছায় একটি ঈষীকা (কাশ তৃণ) নিক্ষেপ করে বললেন, পাণ্ডবরা বিনষ্ট হ’ক। তখন সেই ঈষীকায় কালান্তক যমের ন্যায় অগ্নি উদ্ভূত হ’ল। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন অর্জুন, দ্রোণপ্রদত্ত দিব্যাস্ত্র এখনই নিক্ষেপ ক’রে অশ্বত্থামার অস্ত্র নিবারণ কর।

 অর্জুন বললেন, অশ্বত্থামার, আমাদের, এবং আর সকলের মঙ্গল হ’ক, অস্ত্র দ্বারা অস্ত্র নিবারিত হ’ক। এই বলে তিনি দেবতা ও গুরুজনের উদ্দেশে নমস্কার ক’রে ব্রহ্মশির অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। তাঁর অস্ত্রও প্রলয়াগ্নির ন্যায় জ্বলে উঠল। তখন সর্বভূতহিতৈষী নারদ ও ব্যাসদেব দুই অগ্নিরাশির মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, বীরদ্বয়, পূর্বে কোনও মহারথ এই অস্ত্র মানুষের উপর প্রয়োগ করেন নি; তোমরা এই মহাবিপজ্জনক কর্ম কেন করলে?

 অর্জুন কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, অশ্বত্থামার অস্ত্র নিবারণের জন্যই আমি অস্ত্র প্রয়োগ করেছি; যাতে সকলের মঙ্গল হয় আপনারা তা করুন। এই ব’লে অর্জুন তাঁর অস্ত্র প্রতিসংহার করলেন। তিনি পূর্বে ব্রহ্মচর্য ও বিবিধ ব্রত পালন করেছিলেন সেজনাই ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রত্যাহার করতে পারলেন, কিন্তু অশ্বত্থামা তা পারলেন না। অশ্বত্থামা বিষণ্ণ হয়ে ব্যাসদেবকে বললেন, ভগবান, আমি ভীমসেনের