পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সৌপ্তিকপর্ব
৫৪৫

 তার পর দ্রৌপদীর অনুরোধে যুধিষ্ঠির সেই মণি মস্তকে ধারণ ক’রে চন্দ্রভূষিত পর্বতের ন্যায় শোভান্বিত হলেন। পুত্রশোকার্তা দ্রৌপদীও গাত্রোত্থান করলেন।

৭। মহাদেবের মাহাত্ম্য

 যুধিষ্ঠির কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, নীচস্বভাব পাপী অশ্বত্থামা কি ক’রে আমাদের মহাবল পুত্রগণ ও ধৃষ্টদ্যুম্নাদিকে বিনষ্ট করতে সমর্থ হলেন? কৃষ্ণ বললেন, মহাদেবের শরণাপন্ন হয়েই তিনি একাকী বহু জনকে বধ করতে পেরেছেন। তার পর কৃষ্ণ এই আখ্যান বললেন। —

 পুরাকালে ব্রহ্মা মহাদেবকে প্রাণিসৃষ্টির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। মহাদেব সম্মত হলেন এবং জলে মগ্ন হয়ে তপস্যা করতে লাগলেন। দীর্ঘকাল প্রতীক্ষার পর ব্রহ্মা তাঁর সংকল্প দ্বারা অপর এক স্রষ্টা উৎপন্ন করলেন। এই পুরুষ সপ্তবিধ প্রাণী এবং দক্ষ প্রভৃতি প্রজাপতিগণকে সৃষ্টি করলেন। প্রাণীরা ক্ষুধিত হয়ে প্রজাপতিকেই খেতে গেল। তখন ব্রহ্মা প্রজাগণের খাদ্যের জন্য ওষধি ও অন্যান্য উদ্ভিদ, এবং প্রবল প্রাণীর ভক্ষ্য রূপে দুর্বলপ্রাণী নির্দেশ করলেন। তার পর মহাদেব জল থেকে উঠলেন, এবং বহুপ্রকার জীব সৃষ্ট হয়েছে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে ব্রহ্মাকে বললেন, অপর পুরুষ প্রজা উৎপাদন করেছে, আমি লিঙ্গ নিয়ে কি করব? এই ব’লে তিনি ভূমিতে লিঙ্গ ফেলে দিয়ে মুঞ্জবান পর্বতের পাদদেশে তপস্যা করতে গেলেন।

 দেবযুগ অতীত হ’লে দেবতারা যজ্ঞ করবার ইচ্ছা করলেন। তাঁরা যথার্থ রূপে রুদ্রকে জানতেন না সেজন্য যজ্ঞের হবি ভাগ করবার সময় রুদ্রের ভাগ রাখলেন না। রুদ্র রুষ্ট হয়ে পাঁচ হাত দীর্ঘ ধনু নিয়ে দেবগণের যজ্ঞে উপস্থিত হলেন। তখন চন্দ্রসূর্য অদৃশ্য হ’ল, আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হ’ল, দেবতারা ভয়ে অভিভূত হলেন। রুদ্রের শরাঘাতে বিদ্ধ হয় অগ্নির সহিত যজ্ঞ মৃগরূপ ধারণ ক’রে আকাশে গেল, রুদ্র তার অনুসরণ করতে লাগলেন। যজ্ঞ নষ্ট হ’লে দেবতারা রুদ্রের শরণাপন্ন হলেন এবং তাঁকে প্রসন্ন ক’রে তাঁর জন্য হবির ভাগ নির্দেশ ক’রে দিলেন। রুদ্রের ক্রোধে সমস্ত জগৎ অসুস্থ হয়েছিল, তিনি প্রসন্ন হ’লে আবার সুস্থ হ’ল।

 আখ্যান শেষ ক’রে কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, অশ্বত্থামা যা করেছেন তা নিজের শক্তিতে করেন নি, মহাদেবের প্রসাদেই করতে পেরেছেন।