পাতা:মহাভারত - রাজশেখর বসু.pdf/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্ত্রীপর্ব
৫৪৭

অভিভূত করে, কিন্তু পণ্ডিতকে করে না। কুরুশ্রেষ্ঠ, কালের কেউ প্রিয় বা অপ্রিয় নেই, কাল কারও প্রতি উদাসীনও নয়; কাল সকলকেই আকর্ষণ ক’রে নিয়ে যায়।

 তার পর বিদুর বললেন, গর্ভাধানের কিছু পরে জীব জরায়ুতে প্রবেশ করে, পঞ্চম মাস অতীত হ’লে তার দেহ গঠিত হয়। অনন্তর সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ হয়ে ভ্রূণরূপে সে মাংসশোণিতযুক্ত অপবিত্র স্থানে বাস করে। তার পর বায়ুর বেগে সেই ভ্রূণ ঊর্ধ্ব পাদ অধঃশিরা হয়ে বহু কষ্ট ভোগ ক’রে যোনিদ্বার দিয়ে নির্গত হয়। সেই সময়ে গ্রহগণ তার কাছে আসে। ক্রমশ সে স্বকর্মে বদ্ধ হয় এবং বিবিধ ব্যাধি ও বিপদ তাকে আশ্রয় করে, তখন হিতৈষী সুহৃদ্‌গণই তাকে রক্ষা করেন। কালক্রমে যমদূতেরা তাকে আকর্ষণ করে, তখন সে মরে। হা, লোকে লোভের বশে এবং ক্রোধ ও ভয়ে উন্মত্ত হয়ে নিজেকে বুঝতে পারে না। সৎকুলে জন্মালে নীচকুলজাতের এবং ধনী হ’লে দরিদ্রের নিন্দা করে, অন্যকে মূর্খ বলে, নিজেকে সংযত করতে চায় না। প্রাজ্ঞ ও মূর্খ, ধনবান ও নির্ধন, কুলীন ও অকুলীন, মানী ও অমানী সকলেই যখন পরিশেষে শ্মশানে গিয়ে শয়ন করে তখন দুষ্টবুদ্ধি লোকে কেন পরস্পরকে প্রতারিত করে?

২। ভীমের লৌহমূর্তি

 ব্যাসদেব ধৃতরাষ্ট্রের কাছে এসে বহু সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তুমি শোকে অভিভূত হয়ে বার বার মূর্ছিত হচ্ছ জানলে যুধিষ্ঠিরও দুঃখে প্রাণত্যাগ করতে পারেন। তিনি সকল প্রাণীকে কৃপা করেন, তোমাকে করবেন না কেন? বিধির বিধানের প্রতিকার নেই এই বুঝে আমার আদেশে এবং পাণ্ডবদের দুঃখ বিবেচনা ক’রে তুমি প্রাণধারণ কর, তাতেই তোমার কীর্তি ধর্ম ও তপস্যা হবে। প্রজ্জ্বলিত অগ্নির ন্যায় যে পুত্রশোক উৎপন্ন হয়েছে, প্রজ্ঞারূপ জল দিয়ে তাকে নির্বাপিত কর। এই ব’লে ব্যাসদেব প্রস্থান করলেন।

 ধৃতরাষ্ট্র শোক সংবরণ ক’রে গান্ধারী, কুন্তী এবং বিধবা বধূদের নিয়ে বিদুরের সঙ্গে হস্তিনাপুর থেকে যাত্রা করলেন। সহস্র সহস্র নারী কাঁদতে কাঁদতে তাঁদের সঙ্গে চলল। এক ক্রোশ গিয়ে তাঁরা, অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মাকে দেখতে পেলেন। কৃপাচার্য জানালেন যে ধৃষ্টদ্যুম্ন ও দ্রৌপদীর পঞ্চ পুত্র প্রভৃতি সকলেই নিহত হয়েছেন। তার পর কৃপাচার্য হস্তিনাপুরে, কৃতবর্মা নিজের দেশে, এবং অশ্বত্থামা ব্যাসের আশ্রমে চ’লে গেলেন।